ব্রিটেনের তরুণ এক কনসেপ্ট ডিজাইনার টমাস থোয়েটস্ ছয়দিন সুইজারল্যান্ডের পাহাড়ে ছাগল হিসাবে জীবন কাটালেন। এ সময় তিনি ছাগলের মতো 'চার পায়ে' হাঁটাচলা করেন। ক্ষুধা লাগলে খেয়েছেন ঘাস।
একটি গবেষণায় অংশ নিতে ছয়দিন মানুষের জীবন বাদ দিয়ে তিনি ছাগলের জীবন বেছে নিয়েছিলেন।
বিবিসিকে টমাস বলেন, ''একটা সময় আমার ভাল যাচ্ছিল না – বেশ মনমরা লাগছিল- আমার ভাইঝির কুকুরটার দেখাশোনা করছিলাম- কুকুরটা মহা উৎসাহে লাফাচ্ছিল – হৈচৈ করছিল- হঠাৎ মনে হল – ইস্ ওর মত যদি হতে পারতাম- সব ভুলে আনন্দে থাকতে পারতাম।''
''কেন জানি না মনে হল – মানুষ না হয়ে জন্তু হয়ে জন্মালেই ভাল হতো- শুরুটা সেখান থেকেই।''
জীবজন্তুর জীবন, তাদের মনস্তত্ব, তাদের আচরণ ভালভাবে বুঝতে চান টমাস। একবার সরেজমিনে পরীক্ষা করে দেখতে চান মানুষের সাথে তাদের কতটা পার্থক্য।
টমাস বলেন, ''আসলে ছোটবেলাতেও মাঝে মাঝে আমার মনে হতো– বিড়াল হয়ে জন্মালে কী মজা হতো- স্কুলে যেতে হতো না!''
তার ভাবনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি ওয়েলকম ট্রাস্টের কাছে ফান্ডের জন্য আবেদন জানান। ট্রাস্টও টমাসকে তাদের চারুকলা তহবিল থেকে সামান্য কিছু অর্থ দেয় তার অভিনব এই পরীক্ষা চালানোর জন্য।
কিন্তু আর সব জন্তু ছেড়ে ছাগল কেন?
টমাস বলেছেন এর সহজ কোনো উত্তর নেই। তার গবেষণায় তিনি দেখেছিলেন নানা গুহা চিত্রে অর্ধ-মানব অর্ধ-পশুর নানা ধরনের ছবি। সেখানে অর্ধেক-নর অর্ধেক ছাগলের ছবি ছিল অনেক। এর থেকে তার মনে হয়েছিল গুহা মানব কী জীব-জন্তুর আচরণের কোনো প্রতিফলন তাদের জীবনে দেখতে চাইত? তারা কী জীবজন্তুর কিছু আচরণ আয়ত্ত করতে চেয়েছিল?
টমাস বলেন, ''আমি সুইজারল্যান্ডে আল্পস্ পাহাড়ে একটা ছাগলের খামারে কিছুদিন সময় কাটালাম এই প্রকল্পের অংশ হিসাবে। যারা নকল হাত পা বানান তাদের দিয়ে আমি ছাগলের নকল পায়ের খুর বানালাম, চারপায়ে সহজে হাঁটার জন্য দুটো হাতে নকল বাড়তি অংশ লাগালাম। শুধু তাই নয় আমাকে যেহেতু কটা দিন শুধু ঘাস খেয়ে কাটাতে হবে – তাই সেলুলোজ হজম করার জন্য আমাকে শরীরে আলাদা পাকস্থলীও লাগাতে হল।''
টমাস বলেন ছাগলের শারীরবিদ্যা, অ্যানাটমি, মনস্তত্ত্ব সব কিছু নিয়েই তাকে অনেক পড়াশোনা করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ''এরপর শুরু হল ছাগলের সঙ্গে আমার বসবাস। ছাগলের খামারে ছাগলের সঙ্গে আমার মেলামেশা, খাওয়া-দাওয়া এবং ওঠাবসা- আমার ছাগলজীবন যাপন।''
টমাসের কথায়, ''আমি চেয়েছিলাম মনুষ্য জীবনের নানা গ্লানি, সমস্যা-মুক্ত হয়ে ক'টা দিন পশুর মত আনন্দে কাটাতে।''
সূত্র: বিবিসি
বিডি-প্রতিদিন/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ এস আহমেদ