আধুনিক সমাজের বিকাশে অনেক প্রাচীন সভ্যতার অবদান আছে। মায়ান সভ্যতা তাদের অন্যতম। মায়ান সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল ২৬০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে। বর্ণিল এই সভ্যতায় যেমন ছিল হিংস্রতা, নিষ্ঠুর আদিমতা, তেমনি বিকাশ হয়েছিল জ্ঞান-বিজ্ঞানেরও। মায়ানরা হয়ে উঠেছিল প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম সংগঠিত জাতি। তাদের ছিল রাষ্ট্রব্যবস্থা, আইন-কানুন, নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি।
অথচ মধ্য আমেরিকার এই মায়ান সভ্যতা নিয়ে খুব কমই জানে মানুষ। তবে এরই মধ্যে সেখানে খোঁজ মিলেছে মায়া সভ্যতার বিশাল এক নগরীর। রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তির ব্যবহারে এমনই বিস্ফোরক তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আকাশ থেকে নেওয়া ছবিতে মিলেছে ৬০ হাজারের বেশি ঘর, হাইওয়ে, খাল এবং মানুষের তৈরি নানা স্থাপত্য। সেখানে মিলেছে অনেক গোপন সুরঙ্গ। এগুলোকে 'আন্ডারওয়ার্ল্ড'-এ প্রবেশের দ্বার বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এবার সেখানেই চলবে অভিযান।
মেক্সিকোর বিজ্ঞানীরা খুব শিগগিরই মায়ানদের বানানো প্রাচীন পিরামসিডের নিচ দিয়ে অভিযান চালাবে। এই গোপন সুরঙ্গ মায়ানরাই বন্ধ করে রেখেছিল শত শত বছর আগে। পুরাতত্ত্ববিদরা এই পথেই পৌঁছতে চান পানির গভীরে থাকা এক গুহায়, একে বলা হয় 'সিনোতে'। সেখানেই মায়ান সভ্যতার আধ্যাত্মবাদের উৎস সংরক্ষিত আছে বলে মনে করছেন তারা।
সিনোতে আসলে পানিপূর্ণ সুরঙ্গ যেগুলো পানযোগ্য পানির একমাত্র উৎস। এমন অঞ্চলে বেঁচে থাকার অন্যতম উৎস। মায়ান সভ্যতা সৃষ্টির পেছনে এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এসব জায়গায় মায়ানরা মানুষ বলী দেওয়ার সংস্কৃতি চর্চা করতো বলে মনে করা হয়। তারপর সেই দেহ পানির গভীরে ফেলা হতো বৃষ্টির দেবতা 'চাক'কে তুষ্ট করতে।
আন্ডারওয়াটার আর্কিওলজিস্ট গুইলার্মো দে আন্দা বলেন, মায়ানদের কাছে সিনোতে ছিল আন্ডারওয়ার্ল্ডে যাওয়ার প্রবেশদ্বার। প্রকৃতি সৃষ্টির বিষয়ে মায়ানদের তত্ত্বে তিনটি বিষয় ছিল- স্বর্গ, পৃথিবী এবং আন্ডারওয়ার্ল্ড। তৃতীয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অংশই প্রাণের মূল ধারণ করে। এই অংশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে পারলে খরা, দুর্ভিক্ষ এবং অসুস্থতা থেকে মুক্তি মেলে। এ সম্পর্ক স্থাপনেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের জন্যে কিছু উৎসর্গ করতে হয়।
প্রাথমিকভাবে টানেলগুলো পরিষ্কার করার কাজে হাত দেবেন বিজ্ঞানীরা। মেক্সিকোর ইনস্টিটিউট অব অ্যান্থ্রোপলজির বিজ্ঞানীরা দে আন্দার এল ক্যাস্টিলোর নিচে যে সিনোতে আছে তাদের প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বেশ কিছু পরিচিতি সিনোতে সরাসরি উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ এবং এল ক্যাস্টিলোর পশ্চিমে চলে গেছে। এগুলোর এগিয়ে যাওয়ার বৈশিষ্ট্য কোনি পবিত্র ভূমির দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত প্রকাশ করে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, এল ক্যাস্টিলোর সুরঙ্গ হয়তো 'এক্সিস মুন্দি' বা গ্রহের কেন্দ্রের পথ দেখাবে। এখানেই মায়ান সভ্যতায় এক বিশাল বৃক্ষের বর্ণনা রয়েছে। ওটাকে বলা হতো 'প্রাণ বৃক্ষ'। এই সুরঙ্গ মায়ান সভ্যতার আরো অনেক অজানাকে জানাবে বলেই ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
সূত্র : সিএনএন
বিডি প্রতিদিন/০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/এনায়েত করিম