কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাইবান্ধার তিনটি আসনে ভোটগ্রহণ চলছে। শান্তিপূর্ণভাবেই কেন্দ্রগুলোতে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। তবে সকালে ভোটার উপস্থিতি তেমন চোখে পড়ার মতো না থকালেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটারদের উপস্থিতিও বাড়তে দেখা গেছে।
গাইবান্ধা-৩ আসনে পলাশবাড়ীর পশ্চিম মির্জাপুর সিনিয়র মাদরাসা কেন্দ্রে গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সময় জামায়াত-বিএনপির বাধায় ভোট গ্রহণ শুরু করা যায়নি। যদিও সেদিন এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন যে, কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স পৌঁছায়নি। তাই ওই দিন ভোট স্থগিত করে ১৬ জানুয়ারি স্থগিত পুনরায় ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী আজ এই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে। তবে মাদ্রাসাটি ব্যবহারের উপযোগী না হওয়ায় ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ এখন কাশিয়াবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ে চলছে।
গাইবান্ধার-১, ৩ ও ৪ আসনের স্থগিত ২০৬টি কেন্দ্রের সব কয়টিতে আজ সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোতেও ৫ জানুয়ারি ব্যালট না পৌঁছানো এবং কেন্দ্র ভাঙচুর-আগুনের কারণে ভোট শুরু করা যায়নি। সেদিনের মতো কোনও ঘটনা যেন আজ না ঘটে তাই আজ সকাল থেকেই র্যাব-পুলিশ-বিজিবি-সেনাবাহিনীর চার স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে। তবে সকালে প্রচণ্ড কুয়াশা আর শীতের কারণে এই কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। বেলা বাড়ার মাথে রোদ উঠায় ভোটার উপস্থিতি বাড়তে শুরু করেছে।
গাইবান্ধার-৪ আসনের গোবিন্দগঞ্জের একটি ভোটকেন্দ্র তালুক কালুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই কেন্দ্রটিতে সকাল ১০টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৮১টি। বেলা আড়াইটায় এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৭০০টিতে।
পাশের তালুক কালুপুর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রেও একই অবস্থা। সেখানকার প্রিসাইডিং কর্মর্কতা জানান, কেন্দ্রটিতে বেলা ২টা পর্যন্ত ৮৬০টি ভোট পড়েছে। এই কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা এক হাজার ৮৫৭। বেলা ১১টার পর ভোটার উপস্থিতি বাড়তে থাকে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যেখানে প্রতি কেন্দ্রে একজন সশস্ত্র পুলিশ ছিল, এবার সেখানে প্রতি কেন্দ্রে ১৫ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য রয়েছেন। সব মিলিয়ে তিনটি আসনে চার হাজার ১২৯ জন পুলিশ ও দুই হাজার ৪৭২ জন আনসার সদস্য রয়েছেন। এছাড়া ৩৪টি টিমে বিভক্ত হয়ে সেনাবাহিনীর ৯৫৫ জন, বিজিবির ৬০২ জন, র্যাবের ৩০০ সদস্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় কেন্দ্রের বাইরে টহল দিচ্ছেন। সাদা পোশাকে আছেন ২০০ গোয়েন্দা পুলিশ। চারজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ৬৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ হাজার সদস্য কাজ করছেন। প্রশাসন বলছে, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে মোট ১০৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৪টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছিল। এই কেন্দ্রগুলোতে ভোটারসংখ্যা এক লাখ ৫৮ হাজার ২০৯। এর আগে এই আসনের ৩৮টি কেন্দ্রের বেসরকারি যে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে তাতে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম ৪৫ হাজার ৩৮৩ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির কর্নেল (অব.) আবদুল কাদের খান (লাঙ্গল) পান পাঁচ হাজার ৯৫৮ ভোট। আজকের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন কাদের খান।
গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী) আসনে মোট ১৩০টি কেন্দ্রের মধ্যে আজ স্থগিত ৮০টি কেন্দ্রে নির্বাচন হচ্ছে। এই কেন্দ্রগুলোর ভোটার দুই লাখ ২৬ হাজার ৬২৭। এখানকার ৫০টি কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউনুস আলী ৭০ হাজার ৬২৬ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদের স্বতন্ত্র প্রার্থী খাদেমুল ইসলাম পান ১২ হাজার ৭৮১ ভোট। আজকের নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন খাদেমুল ইসলাম।
তিনটি আসনের মধ্যে একমাত্র গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনেই নির্বাচনের চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আজ। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। এই আসনের ১৩০টি কেন্দ্রের মধ্যে স্থগিত ৭২টি কেন্দ্রে আজ নির্বাচন হবে। এই কেন্দ্রগুলোর ভোটার দুই লাখ ৭৭। এখানে সর্বশেষ ঘোষিত ৫৮টির ফলাফলে আনারস প্রতীক নিয়ে আবুল কালাম আজাদ ৫৯ হাজার ৮৬২ ভোট পান। আর মনোয়ার হোসেন চৌধুরী পান ১৮ হাজার ৮০৬ ভোট।