বহুল আলোচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী ছাত্র জুবায়ের আহম্মেদ হত্যা মামলার রায় শুনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তার বাবা অবসর প্রাপ্ত নৌবাহিনীর সদস্য তোফায়েল আহম্মেদ ও মা গৃহিনী হাসিনা আহম্মেদ। তিন বছর পর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক এবিএম নিজামুল হক রবিবার এ হত্যা মামলার রায় প্রদান করেন।
রায়ের খবর শোনার পরপরই পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের মদিনাবাগ এলাকার বাসায় সাংবাদিকরা ছুটে গেলে জুবায়েরের বাবা-মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় তার মা হাসিনা আহম্মেদ ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার দুইটি প্রদীপ ছিল। আলো ছড়ানোর আগেই একটি নিভে গেছে। মৃত্যুর কিছুদিন আগেও বলেছিল, মা তোমার ছেলে দেশের বড় কিছু হবে, তখন আমি বলেছিলাম এটা শুনতে চাই না, দেখতে চাই। জুবায়ের বলেছিল, তুমি দেখ মা আমি ঠিকই বড় কিছু হয়ে দেখাব। তার সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। সন্ত্রাসীরা তা পূরণ করতে দিলনা।
তিনি আরও বলেন, ছেলের শোকে এখনও ঠিকমত ঘুমাতে পারি না। এই মুহূর্তে আমার একটাই আকুতি ওর হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর করা হোক। এই বিচার দেখে যেতে পারলে মরেও শান্তি পাব।
জুবায়েরের বাবা তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, ছেলে হত্যার পর থেকে আমি ক্রমশই অসুস্থ্ হয়ে পড়ছি। একটি সন্তানকে মানুষ করা কত কষ্টের তা বলে বুঝানো যাবে না। সন্তানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ফাঁসির রায় হয়েছে এ খবর শুনে শুকরিয়া আদায় করছি। ফাঁসি হওয়া যেসব আসামী পলাতক রয়েছে, তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে রায় কার্যকর করার তিনি দাবি জানান।
জানা গেছে, ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি সন্ত্রাসীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কারখানার পিছনে ধরে নিয়ে তাকে নির্মমভাবে রড দিয়ে পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। এতে জুবায়ের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষার্থী তাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। এরপর তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে ৯ জানুয়ারি সকালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-রেজিষ্টার হামিদুর রহমান বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় এজাহার দায়ের করে।
পুলিশ মুল আসামী খন্দকার আশিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে এবং তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে রক্তমাখা মাটি, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা বিভিন্ন উপাদান উদ্ধার করে। তদন্তের বিভিন্ন পর্যায়ে অন্যান্য আসামিদের পুলিশ গ্রেফতার করে। আসামিদের মধ্যে মাহবুব আকরাম ও নাজমুস শাকিব তপু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
২০১২ সালের ৮ এপ্রিল পুলিশ উল্লেখিত আসামীদের নাম উল্লেখ করে চার্জশিট দাখিল করে। পরীক্ষার কারণ দেখিয়ে আসামিরা সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিল। ৬ জন আসামি জামিনের শর্ত ভঙ্গ করায় দ্রত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ তাদের জামিন বাতিল করে। এ সময় কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামিদের মধ্য থেকে ৪ আসামি খন্দকার আশিকুল ইসলাম, খান মোহাম্মদ রইস, ইশতিয়াক মেহবুব অরূপ ও মাহবুব আকরাম দৌড়ে পালিয়ে যায়। এরা এখনও পলাতক রয়েছে।
মামলায় ২৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। রবিবার বিচারক ১৩ জন আসামির মধ্যে রাশেদুল ইসলাম রাজু, কামরুজ্জামান সোহাগ, জাহিদ হাসান, মাহবুব আকরাম ও খন্দকার আশিকুল ইসলামের ফাঁসির রায় প্রদান করেন। এছাড়া ইশতিয়াক মেহবুব অরূপ, নাজমুস শাকিব তপু, মাজহারুল ইসলাম, অভিনন্দন কুন্ডুসহ ৬ জনের যাবজ্জীবন ও দুই জনকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫/ রশিদা