অবশেষে সেই পাঁচ ভয়ঙ্কর আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর। এদের জামিন নিয়ে গত শুক্রবার বাংলাদেশ প্রতিদিনে একটি বিশেষ প্রতিবেদন ছাপানো হয়। মামলার নির্ধারিত তারিখ থাকায় সেই আসামিরা আজ আদালতে উপস্থিত হলে তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
জানা যায়, পাকিস্তানি নাগরিকসহ ভয়ঙ্কর পাঁচ জঙ্গি রাজধানীর লালবাগ থানার একটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় তথ্য গোপন করে গোঁজামিল দিয়ে জামিন পায়। এই আসামিদের বিরুদ্ধে ভারতের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগও রয়েছে।
সেইসময় জামিনপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন আবদুল মজিদ, মোহাম্মাদ আলম ওরফে ইয়াসিন, মো. কবির ওরফে আমিন, শেখ মোহাম্মাদ সালামত উল্লাহ ও মো. সফিউল্লাহ। এদের মধ্যে মোহাম্মাদ আলম ওরফে ইয়াসিন হলেন পাকিস্তানের করাচি জেলার আরঙ্গি থানার ১২ নম্বর আরঙ্গি টাউন এলাকার মোহাম্মাদ ইয়াসিনের ছেলে। এসব আসামির এমন বিরল জামিনের খবরে ঢাকার আদালত এলাকায় নানা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতারের পরও এসব আসামিকে আটক রাখা যাচ্ছে না।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর লালবাগ থানার একটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গত বছরের দুই ডিসেম্বর এই আসামিদের গ্রেফতার করে। পরে চলতি মাসের ১১ ফেব্রুয়ারি এ পাঁচ আসামিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ জামিন দেন [যার ফৌজদারি বিবিধ মামলা (সি আর মিস/জামিন আবেদন) নম্বর-৩৩৮/২০১৫]।
গোঁজামিলের ওই জামিন আদেশে উল্লেখ করা হয়, আসামি পক্ষ জামিনের সমর্থনে শুনানিতে উল্লেখ করেন- ‘আসামিরা পরিস্থিতির শিকার। এজাহারে এই আসামিদের নাম নাই। তাদেরকে সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে এ মামলায় গ্রেফতার করা হয়।’কিন্তু মামলার নথিতে দেখা গেছে, এই পাঁচ আসামির নাম মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে এজাহারে বলা আছে, তারা জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। আসামিরা দেশি ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সহযোগী লোকজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ঢাকাসহ সারা দেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। উদ্ধারকৃত আলামত ডেটোনেটর ও বিস্ফোরক দিয়ে বোমা তৈরি করে জঙ্গি কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা ছিল। পুলিশ আরও জানায়, এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে ভারতের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আবদুল কাদের মিয়া রিমান্ড প্রতিবেদনে বলেছেন, আসামিদের অনেকে বর্তমানে বাংলাদেশে স্থায়ী ঠিকানা নাই, তারা দেশের বাইরে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আসামিরা আরএসও, জিআরসি, এআরইউ ও ইসলামী জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে এলোমেলোভাবে বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রদান করেন।
এর আগে গোয়েন্দা পুলিশের এসআই এস এম রাইসুল ইসলাম বাদী হয়ে গত বছরের ৩০ নভেম্বর লালবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জননিরাপত্তা বিঘ্ন ও জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি মজুদ রেখেছিল। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করা হলো।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫/ রশিদা