মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় আজ মঙ্গলবার ঘোষণা করা হবে।
উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে ১৬ জুন মুজাহিদের রায় ঘোষণা করা হবে মর্মে গত ২৭ মে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ জানিয়েছিলেন। আপিল বেঞ্চ সকাল ৯টার পর এই রায় ঘোষণা করবেন।
এই বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
মঙ্গলবারের কার্যতালিকায় মুজাহিদের মামলার রায় এক নম্বরে রাখা হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল যে রায় দিয়েছেন, তার মধ্যেে এটি আপিল বিভাগের চতুর্থ রায়। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের দেওয়া জামায়াত ইসলামীর প্রাক্তন দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। রায়ের জন্য সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুজাহিদকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। তবে জামায়াতের আরেক নেতা নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইবুন্যাল মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিলেও আপিল বিভাগ তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।গত ২৭ মে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে আসামীপক্ষে অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন।
এর আগে ২৬ মে মুজাহিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান ও খন্দকার মাহবুব হোসেন যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন।
গত ১৮ মে রাষ্ট্রপক্ষে আংশিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এরপর ২৫ মে আসামীপক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।
এর আগে ২৯ এপ্রিল এবং ৪, ৫, ৬ ,১৭ ও ১৮ মে আপিলে পেপারবুক পড়া শেষ করেন মুজাহিদের আইনজীবী।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। পরে একই বছরের ১১ আগস্ট খালাস চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন মুজাহিদ।
ট্রাইব্যুনালের পুরো রায়ের বিরুদ্ধে ১১৫টি যুক্তি নিয়ে আপিল করেন মুজাহিদ। ট্রাইব্যুনাল যেসব কারণে সাজা দিয়েছেন, তার আইনগত ও ঘটনাগত ভিত্তি নেই বলেও দাবি করেন তিনি। মূল আপিল ৯৫ পৃষ্ঠার, এর সঙ্গে ৩ হাজার ৮০০ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট দাখিল করা হয়েছে।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনা ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি প্রমাণিত হয়েছে এবং ২টি প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেননি বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১, ৩, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেননি। প্রমাণিত ১ নম্বর অভিযোগকে ৬ এর সঙ্গে সংযুক্ত করে এ দু'টি অভিযোগে সমন্বিতভাবে ও ৭ নম্বর অভিযোগে মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড, ৫ নম্বর অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং ৩ নম্বর অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রমাণিত না হওয়া ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে খালাস পেয়েছেন মুজাহিদ।
বিডি-প্রতিদিন/১৬ জুন ২০১৫/এস আহমেদ