মংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া এলাকায় আল হেলাল-১ নামক একটি ভলগেট নৌযান ডুবে গেছে। এতে বর্তমানে চ্যানেলের ওই অংশ সম্পূর্ণ ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এদিকে নৌযান ডুবির কারণে মংলা বন্দরের হাড়বাড়িয়ার ৫ নং বয়া এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি বিদেশি জাহাজ ভেড়ার কথা থাকলেও ঝুঁকি এড়াতে তার আগমন সিডিউল বাতিল করা হয়েছে। নৌযানটি উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে এমভি শোভন নামের একটি কার্গো জাহাজ ৭৪৫ মেট্রিকটন ফ্লাই আ্যাশ (সিমেন্ট তৈরীর কাচামাল) নিয়ে শরণখোলা রেঞ্জের মরাভোলা চরে আটকা পড়েছে। বুধবার রাতে ঘন কুয়াশায় দিক হারিয়ে ঢাকার মেসার্স আলমগীর নেভিগেশন কোম্পানির ওই জাহাজটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এই একই চরে এ বছরের জুন মাসে দুই হাজার মেট্রিকটন সার নিয়ে এমভি জাবালে নূর নামের জাহাজটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। বনবিভাগ ও এলাকাবাসীর আশঙ্কা, আটকে পড়া জাহাজটি দ্রুত উদ্ধার করা না হলে যে কোনো সময় সেটি ডুবে গিয়ে সুন্দরবন আবারও বড় ধরণের বিপর্যের সম্মুখীন হবে।
মংলা বন্দরের হারবার বিভাগ জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে বন্দরের পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়ার ৫নং বয়ায় থাকা বিদেশি জাহাজ এম ভি ইয়ানচুন পণ্য খালাস শেষে বন্দর ত্যাগ করে। এ সময় আল হেলাল-১ নামক একটি নৌযান (ভলগেট) ওই জাহাজ থেকে গ্রাফ (পণ্য ওঠা-নামানো ও খালাসের যন্ত্র) নিয়ে মংলায় আসার পথিমধ্যে দুপুর ২টার দিকে তলা ফেটে মূল চ্যানেলে ডুবে যায়। এরপর থেকে বন্দর চ্যানেলের ওই অংশ চরমভাবে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। নৌপথটি ঝুকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় হাড়বাড়িয়ার ৫ নম্বর বয়াতে এম ভি ফনিক রাইজিং নামক অপর একটি বিদেশি জাহাজ ভেড়ার সিডিউল থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হয়।
হারবার বিভাগ আরও জানায়, ডুবন্ত নৌযানটি উদ্ধার না করা পর্যন্ত হাড়বাড়িয়ার ৫ নম্বরে নতুন করে কোন জাহাজ ভেড়ানো যাবে না।
এ ব্যাপারে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার কমান্ডার মো. হাসান বলেন, নৌযান ডুবির কারনে মংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের ওই স্থানে একটি জাহাজ ভেড়ার কথা থাকলেও ঝুঁকি এড়াতে সেটির আগমন ও অবস্থান বাতিল করা হয়। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিচালন) আলতাফ হোসেন জানান, নৌযানটি উদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থল ছাড়া বন্দরের চ্যানেলের অন্য অংশ নিরাপদ রয়েছে। গত ২৭ অক্টোবর রাতে বন্দরের পশুর চ্যানেলের জয়মনি এলাকায় কয়লা নিয়ে ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজ এম ভি জিয়া রাজ এখন পর্যন্ত উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে পূর্ব সুন্দরবনের এমভি শোভন নামের একটি কার্গো জাহাজ ৭৪৫ মেট্রিকটন ফ্লাই আ্যাশ (সিমেন্ট তৈরীর কাচামাল) নিয়ে শরণখোলা রেঞ্জের মরাভোলা চরে আটকা পড়েছে। বুধবার রাতে ঘন কুয়াশায় দিক হারিয়ে ঢাকার মেসার্স আলমগীর নেভিগেশন কোম্পানির ওই জাহাজটি দুর্ঘটনার শিকার হয়।
শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) একেএম ইউসুফ আলম জানান, আটকে পড়া জাহাজের মালিকের নাম মো. শোভন আহমেদ। তার বাড়ি ঢাকার নয়াপল্টন এলাকায়। তিনি আরো জানান, জাহাজের মাস্টারসহ ১০ জন নাবিক সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছেন। তারা ওই জাহাজেই অবস্থান করছেন।
মের্সাস আলমগীর নেভিগেশন কোম্পানির সুপারভাইজার মো. জয়নাল আবেদীন জানান, ঢাকার মুক্তাপুর আমিরাত সিমেন্ট কোম্পানি ভারত থেকে ৭৪৫ মেট্রিকটন ফ্লাইআ্যাশ আমদানি করে। বোঝাই জাহাজটি সুন্দরবনের অভ্যন্তর থেকে গন্তব্যে ফেরার সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়। প্রথমে আটকে পড়া জাহাজটির মাস্টার-নাবিকরা স্থানীয়দের নিয়ে এটি নামানো চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। দু'একদিনের মধ্যেই অন্য জাহাজে মাল শিপ্টিং করে ওই জাহাজটি খালি করে উদ্ধারে চেষ্টা করা হবে। তিনি জানান, আগামীকাল (শুক্রবার) জাহাজ মাষ্টার আ. ওহাবকে শরণখোলা থানায় এ ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে বলা হয়েছে। জাহাজের মালিকের নাম মো. আসিফ শোভন বলে জানান তিনি।
শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, ভারত থেকে সিমেন্ট তৈরীর কাচামাল (ফ্লাইআ্যাশ) বোঝাই করে জাহাজটি সুন্দরবনের এই রুট হয়ে ঢাকার মুক্তাপুরে যাচ্ছিল। ১ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের নিকটবর্তী মরাভোলা এলাকা অতিক্রমকালে ঘন কুয়াশায় দিক হারিয়ে জাহাজটি চরে উঠে যায়। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। জাহাজটি তাদের নজরদারিতে রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/০৩ ডিসেম্বর ২০১৫/ এস আহমেদ