ঢাকার গুলশান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহভাজন জঙ্গি মারজানের পরিচয় মিলেছে। তার পুরো নাম নুরুল ইসলাম মারজান। সে পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাড়ি গিয়ে বিয়ে করে ঘরছাড়া হন তিনি। সোমবার সন্ধ্যায় তার পরিচয় নিশ্চিত করেছে পরিবার।
মারজান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের আরবি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত সাত আট মাস ধরে পরিবারের সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। হোসিয়ারী শ্রমিক বাবার ১০ ছেলে-মেয়ের মধ্যে মারজান দ্বিতীয়।
মারজানের বাবা-মা ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আর্থিক অনটনে বেড়ে উঠেছেন মারজান। আফুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে তিনি পাবনা শহরের পুরাতন বাঁশবাজার আহলে হাদিস কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এরপর পাবনা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে দাখিল ও আলিম পাস করেন। এরপর ২০১৪ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে।
পরিবারের দাবি, পত্রিকায় ছবি প্রকাশের পর তিনি ছেলের বর্তমান অবস্থার কথা জানতে পারেন। এর আগ পর্যন্ত তিনিসহ পরিবারের লোকজন কেউ কিছু জানতেন না। সেই সাথে মারজানকে যারা জঙ্গি বানিয়েছে তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এদিকে জানা গেছে, মারজানের বাবা নিজাম উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার রাতে আটক করছে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে পাবনা পুলিশের উর্দ্ধতন কেউই স্বীকার করেননি বিষয়টি।
পাবনা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি।
এদিকে পাবনার পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বলেন, বিভিন্ন সংস্থা আছে, কারা আসলে এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন আমাদেরও জানা নেই।
মারজানের বোন আফিয়া সুলতানা আশা বলেন, আমার ভাই অনেক ভাল ছাত্র ছিল, তাকে কারা জঙ্গি বানালো, আমরা তাদের বিচার চাই। তবে আমার ভাইও যদি এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকে আমার ভাইয়েরও বিচার হোক।
মারজানের বাবা নিজাম উদ্দিন বলেন, আমি খুব কষ্ট করে আমার ছেলের পড়াশুনা করাতাম। বেশ কিছু দিন ধরে সে পরিবারের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের ধারনা ছিল বিয়ে করার কারনেই হয়তো আমাদের এখানে আসে না। গত ৭ মাস সে বাড়ি আসেনি। সে যখন পাবনা কামিল মাদরাসা থেকে আলিম পাশ করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়, আমি বলেছিলাম টাকা তো নেই, কি করে তোমারে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াব। মারজান বলেছিল যে, কয়েক মাস চালালে আমি প্রাইভেট ঠিক করে নিব। তখন আর তোমার টাকা দিতে হবে না। সে খুব ভাল ছাত্র থাকার কারনে সে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়। ভর্তির প্রথম প্রথম ভালই যোগাযোগ ছিল, বছর খানেক হলো বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকেই সে বাড়িতে কম কম যাতায়াত করতো।
এলাকাবাসী ও তার বন্ধু মোহাম্মদ রানা ও সাগর হোসেন রনি বলেন, আমরা এক সাথে লেখাপড়া করতাম। কোন দিন এ ধরনের কার্যকলাপ আমাদের চোখে পড়েনি। সে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছে। তবে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ কম। তবে এ ধরনের কাজের সাথে জড়িত হওয়ার ছেলে সে না। সঙ্গ দোষে হয়তো সে এ ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আমাদের ধারনা।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৫ আগস্ট, ২০১৬/ আফরোজ/এস আহমেদ