রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সংসদে বিশেষ আলোচনার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করে কমিটিকে ভারত, চীন, মিয়ানমার ও জাতিসংঘ সফরের মাধ্যমে সংসদে প্রতিবেদন দাখিল করার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সরকার ও সরকারের শরিকদলের সদস্যরা।
বুধবার মাগরিবের নামাজের বিরতির পর ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাবিব মিয়া সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে এসব দাবি উত্থাপন করেন সরকারি দলের সিনিয়র সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। পরে তাকে সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ নিয়ে তারা বলেন, এটি শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। এই সমস্যা সমাধান দ্বি-পাক্ষিকভাবে হবে না, জাতিসংঘসহ ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। তারা বলেন, আর কত দিন আমরা এই বোঝা বহন করবো। মিয়ানমারের সাথে আমাদের যে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি হয়েছিল তা যথাযথ ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে নতুন সংসদের নতুন সরকারের অবস্থান কী তা দেশবাসী ও বিশ্বকে জানানো উচিত।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আজকে একটি পত্রিকায় হেডলাইন আছে, বিশ্বের সব রোহিঙ্গা বাংলাদেশকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করছে। মিয়াননের পর এখন ভারত ও সৌদি আরব থেকেও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে। আজকে একটি জাতীয় দৈনিকে আছে, রোহিঙ্গাদের নাগরিত্ব দিয়ে সম্মানের সাথে ফিরিয়ে নিতে হবে বলেছেন হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি বলেছেন। আরেকটি পত্রিকার খবর আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। আজকে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বিস্তারিত বলেছেন।
আমি শুধু বলতে চাই, ইউরোপে শরণার্থী নিতে ধনী দেশগুলো ভয় পেয়েছিল, আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি স্বপ্লোন্নত দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও মায়ের মমতা নিয়ে এইসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। এখন ১১ লাখ রোহিঙ্গা আছে এই বাংলাদেশে। এই জন্য তিনি মাদার অব হিউমিনিটি হয়েছেন।
তিনি বলেন, এই কয়েক বছরের মিয়ানমারের অনীহার কারণে মাত্র তিন জন ফেরত গেছে। তাই অনুরোধ করবো, এই ব্যাপারে একটি বিশেষ আলোচনার ব্যবস্থা করা হোক। আপনি সুযোগ দেন, আমরা সব দল আছি, সরকারি- বিরোধী দল আছি। আমরা আলোচনা করে মতামত দেই। প্রয়োজনে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এমন প্রয়োজনে সংসদীয় কমিটি গঠন করে সব দল থেকে প্রনিনিধি নিয়ে ভারত, চীন, মিয়ানমারে গিয়ে প্রয়োজনে এব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। এভাবে চলতে পারে না।
নাসিমের প্রস্তাব সমর্থন করে রাশেদ খান মেনন বলেন, এই দ্বি-পাক্ষিক যে চুক্তি আমরা মিয়ানমানের সাথে করেছিলাম। অত্যাবশ্যকীয় ব্যাপারে এই বিষয়টি কতখানি যথাযথ ছিল তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করি। আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দোষ দিচ্ছি না। কিন্তু আমি এইটুকু বলতে চাই, আন্তর্জাতি বন্ধুরা যে পরামর্শ দিয়েছেন। মনে করেছেন তারা এ সমস্যার সমাধান করবেন। তারা তাদের রাজনীতি করেছেন আমরা আমাদের রাজনীতি করেনি। মিয়ানমার ফিলিস্থিনের মতো হতে পারে না। ফিলিস্তিনের মতো আজকে তাদের রিফিউজি কলোনীতে থাকতে হবে, নতুনকরে চরমপন্থার উদ্ভব হবে- এটা অবম্ভব ব্যাপার।
হাসানুল হক ইনু বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের যে প্রস্তাবটা দিয়েছেন সেটা নিয়ে একটা দিন ধার্য করুন, জনপ্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কী দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করেন তা দেশবাসীকে জানানো উচিত এবং বিশ্ববাসীকে জানানো উচিত। সংসদের হয়ে সর্বদলীয় কমিটি সমগ্র রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামানোর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট দেশ, জাতিসংঘে সফর করে সরেজমিনে প্রতিবেদন তৈরি করে সেটা সংসদে পেশ করা হোক।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন