শ্রমিক আইন না মেনে ধর্মঘট বা লক-আউট করলে ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং কোন মালিক মিথ্য বিবৃতি দিলে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড আর কোন শ্রমিক মিথ্যা বিবৃতি দিলে ৫০ হাজার অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন, ২০১৯’ বিল সংসদে উত্থাপিত হয়েছে।
সংসদ কার্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আজ বিলটি উত্থাপন করেন।
বিলটি উত্থাপনের আগে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম শ্রম আইন ২০০৬ সহ বেশ কয়েকটি আইনের উল্লেখ করে বলেন, নতুন করে এই আইনটির কোন প্রয়োজন নেই। এই আইনের বিষয়গুলো বিদ্যমান শতাধিক আইনেই আছে। একই রকম বিষয়ে বিভিন্ন আইনের কারণে একেক রকম শাস্তি হয়। তিনি বিলটি সংসদে উত্থাপন না করার আহবান জানান। পরে বিরোদী দলের সদস্যের আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে বিলটি ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
গত ডিসেম্বয মাসে বিলটিতে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পরে এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। সেই অধ্যাদেশটি আইন করতে সংসদে বিল তোলা হলো।
বিলে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়নের আদলে ‘শ্রমিক কল্যাণ সমিতি’ গঠনে শ্রমিকদের সমর্থনের হার ২০ শতাংশ করা হয়েছে। আগের আইনে শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠনের জন্য আগে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন লাগত। এছাড়া প্রস্তাবিত আইনে শ্রমিকদের ধর্মঘট করার ক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থনের বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে সেটা তিন-চতুর্থাংশ ছিল।
বিলে বলা হয়েছে, অবসর গ্রহণের ক্ষেত্রে শ্রমিকরা প্রত্যেক বছরের জন্য ৪৫ দিনের মূল মজুরি পাবেন। প্রস্তাবিত আইনে মালিক সমিতি গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে। এই আইনের অধীনে দাখিল করা কোন আবেদনপত্র বা অন্য কোন দলিলে মিথ্য বিবৃতি দিলে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ৩ মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড পাবেন। আর শ্রমিক হলে ৫০ হাজার অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত হবেন। প্রস্তাবিত আইনে ইপিজেড এলাকায় ১১ সদস্যের মজুরি বোর্ড গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। বোর্ডের চেয়ারম্যঅন সরকার নিযুক্ত হবেন।
বোর্ডে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্তৃপক্ষ, অর্থ বিভাগের প্রতিনিধি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। বোর্ডে মালিক বা শ্রমিক পক্ষ প্রতিনিধি না দিলে বোর্ড নিজ বিবেচনায় প্রতিনিধি মনোনীত করবে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কিত বিবৃতিতে বলা হয়, ইপিজেডে শ্রমিক নিয়োগ, মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক, সর্বনিম্ন মজুরি হার নির্ধারণ, মজুরি পরিশোধ, কার্যকালে দুর্ঘটনাজনিত কারণে শ্রমিকের জখমের জন্য ক্ষতি পূরণ, শ্রমিকের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিধান করতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারিকৃত ‘বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম অধ্যাদেশ, ২০১৯’ কে আইনে রূপ দিতে ‘বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন, ২০১৯’ নামে একটি বিল সংসদে উত্থাপিত হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার