প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনসার সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সর্ববৃহৎ জনসম্পৃক্ত শৃঙ্খলা বাহিনী। এ বাহিনীর প্রায় ৫৫ হাজার পুরুষ এবং মহিলা আনসার সদস্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় জনসম্পদ রক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অন্যদিকে একটি পূর্ণাঙ্গ মহিলা ব্যাটালিয়নসহ ৪১টি ব্যাটালিয়নের প্রায় ১৭ হাজার সদস্য পার্বত্যাঞ্চল ও সমতলে আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত স্ট্রাইকিং ফোর্স ‘এএসএফ’ দেশের কূটনৈতিক ও কূটনৈতিক অঞ্চলের নিরাপত্তায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৯তম জাতীয় সমাবেশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংকটকালে এবং জরুরি মুহূর্তে আপনারা কর্মদক্ষতা ও সফলতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। প্রতি বছর দেশের জাতীয়, সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসবে ব্যাটালিয়ন ও অঙ্গীভূত আনসার সদস্যগণ আইন-শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা রক্ষা, জঙ্গিবাদ এবং মাদক প্রতিরোধে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সম্প্রতি আমাদের যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল, সেই নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্রে প্রায় ৫ লাখ আনসার ভিডিপি সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ভোট কেন্দ্র ও ভোটারদের নিরাপত্তা রায় দায়িত্ব পালন করেছেন। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণকে উপহার দিয়েছেন। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৫ জন আনসার সদস্যকে জীবন দিতে হয়েছে। আমি তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আজকের সমাবেশে আমরা তাদের মরণোত্তর সাহসিকতা পদক দিয়েছি।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট কর্তৃক যখন অগ্নি সন্ত্রাস এবং মানুষকে ককটেল বোমা মেরে রেলগাড়ি লঞ্চসহ সাধারণ মানুষের চলাচলে বাধা তৈরি করেছিল। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে যখন মানুষ হত্যা করেছিল। সেই অগ্নি সন্ত্রাস প্রতিরোধ করবার ক্ষেত্রে এবং বিশেষ করে রেলের নিরাপত্তায় এই আনসার বাহিনী বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাদের এই অনবদ্য ভূমিকার জন্য আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের অংশ হিসাবে সরকারের নতুন উদ্যোগ 'আমার বাড়ি, আমার খামারে' আনসার বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একটি খোলা জিপে চড়ে প্যারেড কমান্ডার এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানকে সাথে নিয়ে প্যারেড পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। আনসারের বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের চৌকস সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অফ অনার প্রদান করে। এবারের সমাবেশে প্যারেড কমান্ডার ছিলেন মো. আইয়ুব আলী। সমাবেশে ৬ শত নারী আনসার সদস্যের অংশগ্রহণে গ্যালারি ডিসপ্লে উপস্থিত সকলের দৃষ্টি কাড়ে।
পরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য বাহিনীর ১৫৩ জন সদস্যকে পদক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের সময় ৫ আনসার সদস্য নিহত হন। তাদের পরিবারের কাছে মরণোত্তর সাহসিকতা পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন এবং বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ তাকে স্বাগত জানান।
পরে বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণে একাডেমির ছাতালেক-এ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী ও আমন্ত্রিত অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি, গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্র্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমী বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়েছিল।
বিডি প্রতিদিন/কালাম/ফারজানা