শিরোনাম
৩ মার্চ, ২০১৯ ১৩:০৫

পতাকার মান রক্ষা করা সৈনিকের পবিত্র দায়িত্ব : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

পতাকার মান রক্ষা করা সৈনিকের পবিত্র দায়িত্ব : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পতাকা হলো জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সম্মান এবং মর্যাদার প্রতীক। তাই পতাকার মান রক্ষা করা সকল সৈনিকের পবিত্র দায়িত্ব। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ দেশের সম্পদ, দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক। তাই পেশাদারিত্বের কাঙ্খিত মান অর্জনের জন্য সেনাবাহিনীর সকলকে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ এবং মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে। পবিত্র সংবিধান এবং দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় সদাপ্রস্তুত থাকতে হবে। 
 
আজ রবিবার দুপুরে রাজশাহী সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর ৭, ৮, ৯ এবং ১০ বীর এর ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড (জাতীয় পতাকা) প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
 
সেনাবাহিনীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যে কোনো ইউনিটের জন্য বিরল সম্মান ও গৌরবের বিষয়। কর্মদক্ষতা, কঠোর অনুশীলন এবং কর্তব্য নিষ্ঠার স্বীকৃতি হিসেবে যে পতাকা আজ আপনারা পেলেন তার মর্যাদা রক্ষার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে আপনারা সব সময় প্রস্তুত থাকবেন। পতাকা পাওয়ায় আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই।
 
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। সালাম জানান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। এছাড়া জাতির প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর যে সকল সদস্য বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ স্বীকার করে কাজ করছেন তাদেরকেও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
 
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একটি শক্তিশালী স্বশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার নির্দেশেই ১৯৭২ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমি। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে শান্তিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন। তার সুদূরপ্রসারি এ প্রতিরক্ষা নির্দেশনার আলোকেই সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ ও দেশের বাইরে একটি অত্যন্ত সম্মানজনক অবস্থানে উন্নীত হয়েছে।
 
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পদাতিক বাহিনীর গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাশাপাশি পদাতিক বাহিনীর দ্বিতীয় রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন আমরাই সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেছি। ১৯৯৯ সালে আমি বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট গঠনের ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদন প্রদান করি। ২০০১ সালের ২১ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের পতাকা উত্তোলন করি। ২০১১ সালে আমি এ রেজিমেন্টকে মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় পতাকা প্রদান করি। বর্তমানে এই রেজিমেন্টে দুটি প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নসহ ৪৩টি ইউনিট রয়েছে। 
 
একটি আধুনিক ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে তার সরকার বদ্ধপরিকর জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক বাহিনী গড়ে তুলতে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রণয়ন করে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর আওতায় সেনাবাহিনীর নতুন নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড, ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমরা তিনটি নতুন ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রথমবারের মতো প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। দেশের আকাশ প্রতিরক্ষাকে আরও সুসংহত করতে সংযোজিত হয়েছে এমএলআরএস ও মিসাইল রেজিমেন্ট। আধুনিক বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, হেলিকপ্টার, আর্টিলারি গান এবং মডার্ণ ইনফ্যান্ট্রি গেজেট সংযোজন করে সেনাবাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতাকে বৃদ্ধি করেছি।
 
দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেন। বলেন, সেনাবাহিনী তার মূল কার্যক্রমের পাশাপাশি সব সময়ই জাতির গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত করেছে। বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ তদারকি, যোগাযোগের জন্য কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প, ফেনির মহিপাল ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার আপনাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সেনাসদস্যরা আত্মত্যাগ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনছে সম্মান ও মর্যাদা, যা বহিঃর্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।
 
বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীর সদস্যদের নানা সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যদের চিকিৎসা সেবা ও আবাসনসহ বিভিন্ন কল্যাণমূলক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। রেশন বৃদ্ধি করেছি। ভাতা ও ক্ষতিপূরণ অনুদান উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করেছি। জেসিওর পদকে দ্বিতীয় থেকে প্রথম শ্রেণি এবং সার্জেন্ট পদকে তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারের প্রশিক্ষণ, প্রশাসন, আবাসনসহ একটি আধুনিক ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে গড়ে তুলতে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। বর্তমানে ট্রেনিং এবং প্রশাসনিক সুবিধা বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নারীর ক্ষমতায়নেও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ২০১০ সালে সেনাবাহিনীতে সর্বপ্রথম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে নারী অফিসার ও ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম নারী সৈনিক ভর্তির যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সম্প্রতি সেনাবাহিনীর একজন নারী চিকিৎসককে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের নারী কর্মকর্তাকে লেফটেন্যান্ট কর্ণেল পদে পদোন্নতি প্রদান ও ইউনিট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী পাইলট সংযোজন একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও নারী অফিসার কন্টিজেন্ট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দেশের জন্য অত্যন্ত সুনাম বয়ে এনেছেন।
 
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশের গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সে জন্য আপনাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আর চতুর্থবারের মতো এবং একটানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করার সুযোগ পাওয়ায় আমি দেশবাসির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমাদের সরকার শাসক হিসেবে নয়, সেবক হিসেবে দেশ পরিচালনা করতে চায়।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করে আমরা ছিট মহলের সমস্যার সমাধান করেছি। আমরা সমুদ্রসীমা জয় করেছি। জলে, স্থলে ও আকাশসীমায় বর্তমানে আমাদের অবস্থান সুষ্পষ্ট ও সুর্নিদিষ্ট হয়েছে। 
 
তিনি বলেন, জনগণের সেবা করার জন্য আমরা সব সময় সেনাবাহিনীর সহযোগিতা পেয়েছি। বর্তমান সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার সময় যখনই প্রয়োজন হবে তখনই সেনাবাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়াবে, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
 
এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে একটি হেলেকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী সেনানিবাসে পৌঁছেন। সেখানে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তাকে স্বাগত জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী শহীদ কর্নেল আনিস প্যারেড গ্রাউন্ডে ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের ৭, ৮, ৯ এবং ১০ বীর এর ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড জাতীয় পতাকা কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে তিনি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং ওই চার বীরকে জাতীয় পতাকা প্রদান করেন।
 
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, নৌ-বাহিনীর প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এএমএমএম আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী, ফজলে হোসেন বাদশা, আয়েন উদ্দিন, এনামুল হক, ডা. মনসুর রহমান, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আদিবা আনজুম মিতা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার প্রমুখ।
 
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর