১৮ আগস্ট, ২০২২ ১৯:১৬
নরসিংদী রেলস্টেশনে তরুণীকে হেনস্তা

পোশাক নিয়ে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহারের দাবি ৫০ নারী অধিকারকর্মীর

অনলাইন ডেস্ক

পোশাক নিয়ে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহারের দাবি ৫০ নারী অধিকারকর্মীর

পোশাকের কারণে নরসিংদী রেলওয়েতে নারীর ওপর যৌন হয়রানির ঘটনায় আদালতের ‌‘পর্যবেক্ষণ’কে নারীবিদ্বেষী উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ৫০ জন নারীবাদী অধিকারকর্মী।

আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তারা এই দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গত ১৮ মে নরসিংদী রেলস্টেশনে ঢাকার ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত এক নারীকে পোশাকের কারণে যৌন হেনস্তা করার ঘটনায় অভিযুক্ত নারীকে জামিন শুনানির সময় আদালত ওই তরুণীর পোশাককে দৃষ্টিকটু বলে নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন। জামিনের পক্ষের আইনজীবী মো. কামাল হোসেন গণমাধ্যমের কাছে জানান যে, ‘আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, গুলশান–বনানীর মতো এলাকায়ও কোনো মেয়ে এ ধরনের পোশাক পরে রাস্তায় বের হয় না। সেখানে গ্রামের মতো একটি জায়গায় পাবলিক প্লেসে এ রকম পোশাক পরা স্বাধীনতা হতে পারে না। যেমন খুশি তেমন পোশাকের নামে আমাদের সোসাইটির কালচারকে ধ্বংস করতে পারে না। ওই মেয়ে যে ধরনের পোশাক পরিহিত ছিল সেটা আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থার সঙ্গে বেমানান। যে কারণেই প্রতিবাদের শিকার হয়েছিল।’ 

এতে আরও বলা হয়, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত আদালতের এই অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিক পর্যবেক্ষণের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দেশের সংবিধানের ২৮ ধারা অনুযায়ী নারীর প্রতি রাষ্ট্র কোনোক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করতে পারবে না এবং নাগরিক হিসেবে নারী সকল ক্ষেত্রে সমান অধিকার পাবে। তাছাড়া জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা এর ১৪ নং পৃষ্ঠায় নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন প্রণয়ন না করা এবং বৈষম্যমূলক সামাজিক প্রথার বৃদ্ধি হ্রাস করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নরসিংদীর ওই ঘটনায় অভিযুক্তের জামিনের পক্ষে থাকা আইনজীবীর বরাত দিয়ে আদালতের যে পর্যবেক্ষণ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে নারীর পোশাকের কারণে নারীর প্রতি যৌন সহিংসতাকে পরোক্ষভাবে বৈধতা দেওয়া হয়েছে এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ দেখানো হয়েছে, যা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নারীর সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে।’ 

‘এই পশ্চাদপদ ধারণাপুষ্ট পর্যবেক্ষণটি জনপরিসরে নারীর প্রতি নির্যাতনকে বৈধকরণ এবং অতি স্বাভাবিকীকরণ করে তুলবে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচারব্যবস্থায় এ ধরনের নারীবিদ্বেষী চিন্তা ও বক্তব্য বাংলাদেশের আপামর নারীসমাজের জন্য গৃহীত উন্নয়নের নীতিমালা এবং কার্যক্রমকে আরও এক ধাপ পিছিয়ে দেয়। এর ফলে নাগরিক হিসেবে নারীর প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি কতটুকু সংবেদনশীল তা নিয়ে স্বভাবতই আমাদের প্রশ্ন জাগে। আমরা আইনজীবীর থেকে প্রাপ্ত আদালতের এই পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহারের দাবি জানাই। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থায় এমন কোনো অসংবেদনশীল ব্যক্তির পদে থাকার দরকার নেই, যিনি এই ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ মতামত দিয়ে বাংলাদেশের নারীদের চলাচল এবং জীবনযাপনের স্বাধীনতার প্রশ্নকে হুমকিতে ফেলে।’ 

বিবৃতি দিয়েছেন :  
১. ফারহানা হাফিজ, জেন্ডার বিশ্লেষক।
২. মাহফুজা মালা, মানবাধিকারকর্মী, গবেষক এবং উন্নয়নকর্মী।
৩. নোভা আহমেদ, অধ্যাপক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।
৪. নাই সু প্রু, মানবাধিকারকর্মী।
৫. মুশফিকা লাইজু, মানবাধিকারকর্মী।
৬. সোহানা আহমেদ, কো অর্ডিনেটর, সাংগাত বাংলাদেশ এবং শিক্ষক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
৭. আফওয়াজা রহমান দৃষ্টি, উন্নয়নকর্মী।
৮. নিধি চাকমা, উন্নয়নকর্মী।
৯. মাহফুজা হক নীলা, সংস্কৃতিকর্মী।
১০. সুমনা শিল্পী, উন্নয়নকর্মী এবং সংস্কৃতিকর্মী।
১১. ফারহানা পারভীন মুমু, আইনজীবী।
১২. মৌসুমি আখতার, উন্নয়নকর্মী।
১৩. লিলিথ অন্তরা, একটিভিস্ট এবং উন্নয়নকর্মী।
১৪. লিসা, শিক্ষানবিশ আইনজীবী এবং সংস্কৃতিকর্মী।
১৫. পদ্মিনী চাকমা, শিক্ষার্থী।
১৬. ইশরাত জাহান ঊর্মি, লেখক ও সাংবাদিক।
১৭.নিস্কৃতি রন্জন মন্ডল উন্নয়ন ও সংবাদকর্মী।
১৮.জলি নূর হক, উন্নয়নকর্মী।
১৯.তরী চাকমা, উদ্যোক্তা।
২০.প্রাপ্তি তাপসী, শিক্ষার্থী।
২১. নাদিরা পারভীন, উন্নয়নকর্মী।
২২. বাসন্তি সাহা, উন্নয়নকর্মী।
২৩.নন্দিনী লোপা, লিয়াঁজো কর্মকর্তা, গ্লোবাল ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি, বিশ্বব্যাংক।
২৪. জাকিয়া শিশির, একটিভিস্ট।
২৫.মৌরী সিদ্দিকা, সাংবাদিক।
২৬.জয়ন্তী চাকমা, একটিভিস্ট, সংস্কৃতিকর্মী।
২৭.জয়শ্রী সরকার, কথা সাহিত্যিক, সংস্কৃতি ও উন্নয়নকর্মী।
২৮.তাহিয়াতুল জান্নাত রেমি, নারী উন্নয়নকর্মী।
২৯.জেমিমা জাহান মিম প্রভাষক, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
৩০.ইসাবা শুহরাত, শিক্ষার্থী।
৩১.নাজিফা তাসনিম খানম তিশা, শিক্ষার্থী।
৩২.ওয়ারদা আশরাফ, উন্নয়ন ও সংস্কৃতিকর্মী।
৩৩.সৈয়দা রতনা, সমাজকর্মী।
৩৪.নিপা দাশ, উন্নয়নকর্মী।
৩৫.প্রাপ্তি প্রতীতি সাহা, শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতি কর্মী।
৩৬.মাইশা খন্দকার, চিত্রশিল্পী।
৩৭.আয়শা সিদ্দিকা, কান পেতে রই।
৩৮.ওয়াসিমা ফারজানা,শিক্ষার্থী।
৩৯.ঋতু সাত্তার, থিয়েটার ও পারফরমেন্স শিল্পী।
৪০.কান্তা রায়, সাংবাদিক।
৪১.সাবিকুন্নাহার কাঁকন সংস্কৃতি কর্মী।
৪২.জাকিয়া রাফা শিক্ষার্থী।
৪৩.শাহনাজ পারভীন- উন্নয়ন কর্মী,প্রোগ্রাম কোঅরডিনেট- GBV প্রোগ্রাম কক্সবাজার, গণ উন্নয়ন কেন্দ্র।
৪৪. নিগার সুলতানা, লেখক, সমাজ কর্মী।
৪৫.জয়া প্রসাদ, উন্নয়নকর্মী।
৪৬.রুবিনা জাহান, মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী।
৪৭ তাহমিনা হক, জেন্ডার বিশ্লেষক।
৪৮.সাদিয়া মাশারুফ, উন্নয়নকর্মী।
৪৯.সাবিনা পারভীন, উন্নয়নকর্মী।
৫০.কাশফিয়া ফিরোজ , জেন্ডার বিশ্লেষক ও উন্নয়নকর্মী।
 
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর