সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইইউ-বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ডায়ালগের ষষ্ঠ সভা

‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধা চেয়েছে বাংলাদেশ সেবা খাতে বিনিয়োগ সীমা প্রত্যাহার চায় ইইউ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে ‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধা চেয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের সেবা খাতে বিদেশি বিনিয়োগ সীমা তুলে নেওয়া, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, কাস্টমস জটিলতা দূর করা এবং বাণিজ্য সহজীকরণের প্রস্তাব দিয়েছে ইইউ। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘ইইউ-বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ সংলাপ’-এর ষষ্ঠ সভায় দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন। এতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নেতৃত্বে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীনসহ বিভিন্ন সংস্থার ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। অন্যদিকে ইইউর হেড অব মিশন মিস রেনেসি তেরেংকের নেতৃত্বে জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, সুইডেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও ইতালির রাষ্ট্রদূতসহ ৪১ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। দ্বিপক্ষীয় এই সংলাপের উদ্বোধনী ভাষণে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। এর তিন বছর পর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশের সুবিধাগুলো আর পাবে না। এ সময় বাংলাদেশ আশা করে, ইইউ বাংলাদেশকে ‘জিএসপি প্লাস’ নামে বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করবে। মন্ত্রী বলেন, ইইউ বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। গত অর্থবছর ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশ ২২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা মোট রপ্তানির প্রায় ৫৮ শতাংশ। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাণিজ্যে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বন্দরগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এর কার্যক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ বাণিজ্য সহজ করতে সবকিছু করে যাচ্ছে এবং বাণিজ্য সহজীকরণ-সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের ইজি অব ডোয়িং বিজনেস সূচকে আট ধাপ এগিয়েছে। ইইউ মিশনপ্রধান মিস রেনেসি তেরেংক বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপের দেশগুলোর বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগকারী। ২০১৮ সালে ইইউ থেকে বাংলাদেশে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ইউরোর সমপরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। অথচ আলোচ্য সময়ে ইইউ থেকে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানি হয়েছে মাত্র সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের। ইউরোপের দেশগুলো থেকে আরও বেশি পণ্য আমদানির লক্ষ্যে বাংলাদেশে যে শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো আছে সেগুলো দ্রুত সমাধানে উদ্যোগী হতে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে রেনেসি তেরেংক আরও বলেন, বাংলাদেশের সেবা খাতে বিদেশি বিনিয়োগ সীমা প্রত্যাহার করা দরকার, যাতে করে ইউরোপের কোম্পানিগুলো এ খাতে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ করতে পারে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়েও সরকারের উদ্যোগ কামনা করেন তিনি।

 ইউরোপের কোম্পানিগুলোর জন্য বাংলাদেশে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নানা ধরনের শুল্ক-কর আরোপিত রয়েছে উল্লেখ করে ইইউ মিশনপ্রধান বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি স্বচ্ছ শুল্ক কাঠামো দরকার, যাতে বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের আরও উন্নতি ঘটে।

সংলাপ শেষে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, দ্বিপক্ষীয় এই ব্যবসায় সংলাপের প্রথম সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৬ সালে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে পাঁচটি সেক্টরের জন্য পাঁচটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। এগুলো হলো- কাস্টমস, ফার্মাসিউটিক্যালস, ট্যাক্স, ফাইনানশিয়াল ফ্লোস এবং বিনিয়োগ। ইইউ এবং বাংলাদেশ বাণিজ্য পরিধি আরও বৃদ্ধি করতে আগ্রহী। এ জন্য উভয় পক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে।

সর্বশেষ খবর