গত ২০ বছরে আমেরিকা প্রবাসীরা শুধুমাত্র সোনালী ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান সোনালী এক্সচেঞ্জের মাধ্যমেই ২.৭ বিলিয়ন ডলার তথা প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা পাঠিয়েছে বাংলাদেশে। এর পরিমাণ আরও বাড়াতে রেমিটেন্স পাঠানোর ফি আরও কমানোর কথা ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি। এ তথ্য প্রকাশ করা হয় নিউইয়র্কে সোনালী এক্সচেঞ্জ কোম্পানী ইনকের গ্রাহক সমাবেশে।
গ্রাহক সমাবেশে বলা হয়, নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় ১০টি শাখা কাজ করছে সোনালী এক্সচেঞ্জের। ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে প্রবাসীদের অর্থ প্রেরণের জন্যে এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু। সোনালী ব্যাংকের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শাখাগুলোও অন লাইনের আওতায় আসায় এর মাধ্যমে খুবই নিরাপদে এবং সবচেয়ে দ্রুত গন্তব্যে টাকা পৌঁছানো হচ্ছে। তাই এর গ্রাহক সংখ্যাও বাড়ছে। দুই দশকের খতিয়ান এবং প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ কীভাবে নামমাত্র ফির বিনিময়ে অনলাইন সিস্টেমে স্বজনের কাছে পাঠানো হচ্ছে সে সব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন সোনালী ব্যাংকের পরিচালণা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. এ এইচ এম হাবিবুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত, পরিচালক সেলিমা আহমেদ এবং নামিজ আহমেদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্যে সোনালী এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সকল প্রবাসীই যদি বৈধ চ্যানেলে স্বজনের কাছে অর্থ প্রেরণ করেন তাহলে মোট রেমিটেন্সের পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়বে। প্রবাসীদের সে ব্যাপারে সচেতন করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।'
৭ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় জ্যামাইকায় তাজমহল পার্টি হলে সর্বস্তরের প্রবাসীদের এ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে এ মোমেন এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান। অনুষ্ঠানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের তাৎপর্য ও প্রেক্ষাপট নিয়েও সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়। এ সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘে 'গ্লোবাল ফান্ড ফর মাইগ্রেশন এন্ড ডেভেলপমন্টে' এর নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে এ মোমেন বলেছেন, 'গত বছর সারাবিশ্বে রেমিটেন্সের পরিমান ছিল ৪৮০ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছর তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬০০ বিলিয়ন ডলার হবে বলে অর্থনীতিবিদ এবং সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। অর্থাৎ উন্নয়নশীল বিশ্বের সার্বিক উন্নয়নে রেমিটেন্সের প্রভাব অপরিহার্য হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। বাংলাদেশও রেমিটেন্সের সুফল পাচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধিত হলেও রেমিটেন্স পাঠানোর ফি এখনও অনেক ক্ষেত্রেই বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। প্রেরিত অর্থের ওপর গড়পরতা ১০% পর্যন্ত ফি নেওয়া হচ্ছে কোথাও কোথাও। জাতিসংঘ চেষ্টা করছে এ ফি কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনতে এবং এই কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশ চাচ্ছে ফি ১% এ নামিয়ে আনতে।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান তার বক্তব্যে ৩ বছর আগে হলমার্ক কেলেংকারিসহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘সে ধরনের পরিস্থিতির অবতারণা আর হবে না এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা কায়েমের সংকল্পে আমার নেতৃত্বে নয়া পরিচালনা পর্যদ দায়িত্ব গ্রহণ করেছে ২০১২ সালে। গত ৩ বছরে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা প্রদর্শনে সক্ষম হয়েছি। সকল শাখা অনলাইনের আওতায় আসায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যেমন হ্রাস পাচ্ছে, একইভাবে অনিয়মের বিষয়গুলোও দূর হচ্ছে।’ হাবিবুর বলেন, ‘৭৫ হাজার কোটি টাকার আমানত রয়েছে সোনালী ব্যাংকে। অর্থাৎ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোগত উন্নয়নের স্বার্থে যে কোন ধরনের প্রকল্প আমরা বাস্তবায়নে সক্ষম।’
এমডি প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, ‘সোনালী এক্সচেঞ্জের প্রতি প্রবাসীদের আস্থা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে জেনে আমি খুশী হয়েছি। বাংলাদেশে সোনালী ব্যাংকের কার্যক্রমের প্রতিফলন হচ্ছে প্রবাসীদের সন্তুষ্টি। আমরা চেষ্টা করছি, আরো কম ফির বিনিময়ে রেমিটেন্স গন্তব্যে পাঠানোর ব্যাপারে।’
অনুষ্ঠানে ৩ জন গ্রাহক বক্তব্য রাখেন। এরা হলেন সৈয়দ মুহম্মদ উল্লাহ, আইনজীবী এন মজুমদার এবং অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম। শেষে গ্রাহকদের সমন্বয়ে র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
বিডি-প্রতিদিন/০৮ মার্চ ২০১৫/ এস আহমেদ