‘পৃথিবীর বুকে চীনের পর যদি কোন দেশ এগিয়ে যায় তবে সেটি হবে বাংলাদেশ। কারণ আমাদের শ্রমিকরা তরুণ ও পরিশ্রমী। চট্টগ্রামে দুটি অর্থনৈতিক জোন হতে যাচ্ছে। নয়শ' একর জায়গা নিয়ে আনোয়ারাতে একটি, অন্যটি হবে ছয় হাজার একর নিয়ে মিরসরাইয়ে। এছাড়াও বাংলাদেশে যে সাতটি অর্থনৈতিক জোনের কাজ চলছে তাতে দেশের এককোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। তখন চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতির প্রাণ কেন্দ্র । বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোরও হবে চট্টগ্রাম। কাজেই চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানে বাংলাদেশের উন্নয়ন।’
বৃহস্পতিবার আরব আমিরাতের স্থানীয় সময় রাত ১০টায় চট্টগ্রাম সমিতির দেয়া এক সংবর্ধনায় প্রবাসীদের এমন আশার বাণী শোনান ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)-এর সহ-সভাপতি ও দ্য চিটাগাং চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে শতকরা ৯২ ভাগ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। কাজেই চট্টগ্রামের সাথে দুবাইয়ের সরাসরি শিপিং ব্যবস্থা চালু হলে আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে দুবাইয়ের সাথে একটি মাইলফলক তৈরী করবে বাংলাদেশ। কারণ বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ীই জানেন না, দুবাই থেকে পণ্য রি-এক্সপোর্ট করা যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বন্দর উন্নয়ন হলে, হবে চট্টগ্রামের উন্নয়ন।’
মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ‘৪৩ বছরে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ভাবে যদি কোনো উন্নয়ন হয়ে থাকে, তবে তা হয়েছে প্রাইভেট সেক্টরে। যে সরকার একটি ব্যবসায়িক পরিবেশ দেবে, তথা চাঁদাবাজ মুক্ত, হয়রানি মুক্ত পরিবেশ পাওয়া যাবে, সেখানে ব্যবসায়ীরা বেশি বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে, কাজও হবে। বর্তমান সরকার ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ দিচ্ছে বলে দেশ এগুচ্ছে। বহদ্দারহাট থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত সরাসরি একটা সড়ক হবে। এতে করে বিদেশে যাত্রীসহ প্রবাসীদের হয়রানি কমবে। তাতে চট্টগ্রামে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হবে প্রবাসীরা।’
দুবাইয়ের ল্যান্ড মার্ক হোটেলে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সমিতি দুবাই ও উত্তর আমিরাতের আহ্বায়ক আইয়ুব আলী বাবুলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দুবাই কনস্যুলেটের কর্মাশিয়াল কাউন্সিলর রফিক আহমেদ, বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি মাহতাবুর রহমান নাছির, ডাক্তার আব্দুর নুর, প্রবাসী ব্যবসায়ী নুরুল আলম।
কমার্শিয়াল কাউন্সিলর রফিক আহমেদ চট্টগ্রাম সমিতির সদস্যদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘কনস্যুলেটের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে যার কারণে আমরা চাইলেও অনেক কিছু করতে পারিনা। আপনারা ফান্ড তৈরি করে অসহায় শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াবেন। অনেক সময় দেশে প্রবাসী শ্রমিকদের লাশ পাঠাতে হয়, অসুস্থ প্রবাসীদের হাসপাতালের খরচ দিতে হয়। এছাড়াও আপনারা এগিয়ে আসতে পারেন জনকল্যাণমুখী কাজে।’
বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি মাহতাবুর রহমান নাছির তার বক্তব্যে বলেন, ‘শতকরা ৬৭ জন প্রবাসী চট্টগ্রামের আর পুরো মধ্যপ্রাচ্যে চট্টগ্রামের শতকরা ৪০ ভাগ প্রবাসী রয়েছেন । সে হিসেবে চট্টগ্রামের উন্নয়ন হচ্ছে না। বিমান বন্দর থেকে সিটিতে প্রবেশ করতে সময় লেগে যায় দেড় ঘণ্টা। যার ফলে চট্টগ্রামের বাইরের লোকগুলো চট্টগ্রামে কম বিনিয়োগ করছে। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি হলে প্রবাসীরা সানন্দে চট্টগ্রামে বিনিয়োগ করবে। এতে চট্টগ্রামের যেমন, তেমনি দেশেরও উন্নয়ন হবে।’
সভাপতি আইয়ুব আলী বাবুল বলেন, ‘প্রবাসীদের জন্য আলাদা অর্থনৈতিক জোন ঘোষণা করে বিনিয়োগের সুযোগ দিলে এক লক্ষ কোটি দিরহাম বিনিয়োগ হবে সেখানে। এতে বেকার জনগোষ্ঠির একটি বিশাল অংশ কাজ পেয়ে যেতো।’ কাজী মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইসমাইল গণি, নওশের আলী, ইঞ্জিনিয়ার মোর্শেদ, কে এম আব্দুল্লাহ, জহিরুল ইসলাম, শিবলী আল সাদিক প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৬ জুন, ২০১৫/ রশিদা