২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১৪৫ শিশু/নাবালককে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়েছে দত্তক হিসেবে। এরমধ্যে ১ বছরের কম বয়সী ৮৪ জন, ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে ২৪ জন, ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৫ থেকে ১২ বছরের মধ্যে ১৭ জন এবং ১৩ বছর থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যে ১৩ জন রয়েছে। ১৪৫ জনের মধ্যে কন্যা শিশু ছিল ৯০ জন। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন বিভাগ এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। উপরোক্ত সময়ে সারাবিশ্ব থেকে মোট ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৯৪ শিশুকে দত্তক হিসেবে এনেছেন আমেরিকানরা। এরমধ্যে নাবালকের সংখ্যা ৯৪ হাজার ৬৫৪। হ্যাগ দত্তক সনদ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সামর্থ্যবানরা বিদেশি শিশুর দত্তক নিতে পারেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশিরাও পাচ্ছেন সে সুযোগ।
তবে বাংলাদেশিদের অনেক আবেদনই যথাযথভাবে পূরণ করতে না পারার জন্যে অনেকেই হতাশ হচ্ছেন। এজন্যে ইউএসসিআইএস তথা যুক্তরাষ্ট্র ইমিগ্রেশন এন্ড সিটিজেনশিপ সার্ভিসের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সকলের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে দত্তক গ্রহণের পূর্বশর্তগুলো স্ব স্ব দেশের আইন অনুযায়ী সম্পাদনের জন্যে। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশি শিশু বা নাবালকের আইনগত অভিভাবকত্ব/ শিশু সন্তান দত্তক গ্রহণ সম্পর্কিত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বি-পাক্ষিক আইনগত যোগ্যতা ও ভিসা প্রসেস সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্র আইনগত অভিভাবকত্ব/ শিশু সন্তান দত্তকের বিষয়টি অতি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক যারা আইনগত অভিভাবকত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ হতে চিহ্নিত শিশু বা নাবালক সন্তান গ্রহণ এবং দ্বি-পাক্ষিক আইনগত যোগ্যতা ও যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন আইন ও নিয়ম অনুসরণ করে শিশু বা নাবালক সন্তানের জন্য ইমিগ্রেশন ভিসা আবেদন প্রসেস করাসহ আইনগতভাবে তাদের সন্তান হিসাবে গ্রহনে আগ্রহী তাদের জন্য এসব তথ্য স্বল্প পরিসরে হলেও দিক নির্দেশনা প্রদানে সহায়তা করবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা এবং টেক্সাসে একযোগে কর্মরত ইমিগ্রেশন সম্পর্কিত অভিজ্ঞ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যরিষ্টার এম. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ হেগ্ কনভেনশনের সদস্য নয় বিধায় বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক তথা আইনগত অভিভাবকত গ্রহণকারী প্রার্থীগণ বাংলাদেশের শিশু বা নাবালকের অভিভাবকত গ্রহণের পূর্বে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের আইনি ও ইমিগ্রেশন যোগ্যতা পূরণের লক্ষ্যে বিষয়টি অত্যন্ত দক্ষতা ও সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে।
প্রথমত, সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের মধ্যে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ও নিয়মানুসারে চিহ্নিত শিশু বা নাবালকের অবাতিলযোগ্য আইনগত অভিভাবকত্ব প্রদান ও গ্রহণ সংক্রান্ত বিশেষ চুক্তি ও অন্যান্য আইনি দলিল সম্পাদন করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে উভয় দেশের দ্বি-পাক্ষিক আইনগত ও ইমিগ্রেশন সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত উল্লেখপূর্বক বাংলাদেশের উপযুক্ত আদালতে লিগ্যাল গার্ডিয়ানশিপ মামলা দায়ের করে আদালত হতে লিগ্যাল গার্ডিয়ািশিপ সংক্রান্ত আদেশ গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বি-পাক্ষিক আইনগত বিষয়সমূহ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন আইন সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় বিষয়াদি না জানার কারণে সাধারণ আইনজীবির মাধ্যমে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট আদালত হতে লিগ্যাল গার্ডিয়ানশিপ মামলার রায় প্রার্থীর পক্ষে পেলেও পরবর্তীতে শিশু বা নাবালক দত্তক সন্তানের ইমিগ্রেশন ভিসা প্রত্যাখান হওয়া বা ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
তৃতীয়ত, আদালতের আদেশ প্রাপ্তির পর বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে না-দাবি পত্রের জন্য আবেদন করতে হবে এবং পরবর্তীতে যথাযথ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছ থেকে সন্তোষজনক তদন্ত প্রতিবেদন আসার পর এবং বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ঐ তদন্ত প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট হলে না-দাবি পত্র ইস্যু করবেন।
চতুর্থত, বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় হতে না-দাবি পত্র ইস্যুর পর আদালত কর্তৃক আইনগতভাবে স্বীকৃত অভিভাবকগণ উপরে উল্লেখিত চুক্তি ও সংশ্লিষ্ট আইনী অন্যান্য দলিল, আদালতের আদেশের কপি, বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইস্যুকৃত না-দাবি পত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দালিলিক কাগজপত্রসহ তাদের শিশু বা নাবালক সন্তানের জন্য বাংলাদেশের পাসপোর্ট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নিকট নতুন পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য আবেদন করবেন। পাসপোর্ট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ আবেদন গ্রহণের পর প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পন্নপূর্বক আদালত কর্তৃক নিযুক্ত নতুন অভিভাবকের নাম উল্লেখপূর্বক শিশু বা নাবালকের সন্তানের নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করবেন।
পঞ্চমত, আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবকগণ তাদের দত্তক শিশু বা নাবালক সন্তানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসসিআইএস ও ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের শিশু-দত্তক ভিসার নিয়ম-কানুনগুলো যথাযথভাবে অনুসরন করে শিশু বা নাবালক সন্তানের জন্য ইমিগ্রেশন ভিসার আবেদন করবেন। এখানে উল্লেখ্য যে, ইউএসসিআইএস ইমিগ্রেশন পিটিশন ও ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ঐ ভিসার আবেদন বিবেচনাকরাকালীন সময় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখবে যে, ইমিগ্রেশন ভিসা আবেদনকারী বাংলাদেশের শিশু বা নাবালক অভিভাবকত্ব আইনি প্রক্রিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম ও আইনি প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরন করে আবেদন করেছেন কিনা।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৩ আগস্ট, ২০১৫/ রশিদা