শয়তান আছর করেছে মনে করে ২১ দিনের শিশু পুত্রকে চার তলা থেকে ছুড়ে ফেলে দেয় ২১ বছর বয়সি বাংলাদেশি মা রাশিদা চৌধুরী। গত ৭ আগস্ট ঘটে যাওয়া এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনায় প্রবাসীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নিউইয়র্কের পুলিশ এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষও নানাভাবে ঘটনার বিশ্লেষণ করছে। কম্যুনিটির লোকজনও মা কর্তৃক শিশু সন্তানকে এমন নিষ্ঠুরভাবে হত্যার প্রকৃত কারণ জানতে আগ্রহী। ১৩ আগস্ট নিউইয়র্ক টাইমস একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে নবাগত ইমিগ্র্যান্ট তথা নারীদের অসহায় জীবন-যাপনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছে।
নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে রিচমন্ডহীল এলাকায় ৮৫-৫৫ ১১৫ স্ট্রিটে অবস্থিত এপার্টমেন্ট ভবনে ৭ আগস্ট ভোর ৪টার দিকে এ নিষ্ঠুর ঘটনাটি ঘটে। রাশিদার স্বামী রিজোয়ান আহমেদ (৪০) পুত্রের এহেন করুণ মৃত্যুতে একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছেন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন স্ত্রীর আচরণে। শিশুটির নামও রাখা হয় বাবার নামে। মায়ের নিষ্ঠুরতার শিকার হওয়ার আগে ৪ দিন সে ছিল লং আইল্যান্ড জুইশ হাসপাতালে। বুকে কষ্টবোধ করায় (ভাইরাল ইনফেকশন) তাকে ৩ আগস্ট ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ৬ আগস্ট অপরাহ্নে শিশু পুত্রসহ রাশিদা বাসায় ফেরেন। কয়েক ঘন্টা পরই রাশিদা শিশুটিকে নিজ এপার্টমেন্টের ৪ তলার জানালা দিয়ে নীচে নিক্ষেপ করেন। নীচে পাকা কোর্টিয়াডে পড়ে সাথে সাথে মারা যায় শিশু রিজোয়ান। রক্তাক্ত কোর্টিয়ার্ড দেখে ওই এপার্টমেন্টের এক বাসিন্দা শিশুর লাশ শনাক্ত করেন। সে সময় দৌঁড়ে নীচে নামেন তার বাবা। পাশে বসে তিনি অঝোরে কাঁদছিলেন।
কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট এটর্নী রিচার্ড এ ব্রাউন এ ঘটনায় হতবাক হয়ে বলেন, 'তরুনী মায়ের এ আচরণ মেনে নেয়া যায় না।' তদন্তকারী পুলিশ অফিসার কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টকে জানান যে, রাশিদা বেগমের আচরণে মনে হচ্ছে তিনি মানসিক স্বস্তিতে নেই। তার মধ্যে এক ধরনের বিষন্নতা বিরাজ করছে।
৪০ ফুট ওপর থেকে পাকা কোর্টিয়ার্ডে পড়ে শিশুটির মাথা, মেরুদন্ড থেতলে যায় বলে মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে।
রাশিদার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে ৮ আগস্ট কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে সোপর্দ করা হয়। এদিনই তাকে গ্রেফতার করার পর নিকটস্থ জ্যামাইকা হাসপাতালে নিয়ে তার মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা হয়। সে সময় তিনি দাবি করেন যে, সন্তানকে শয়তানের কবল থেকে রক্ষার জন্য জানালা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়। তাকে জামিন প্রদান না করে রাইকার আইল্যান্ড কারাগারে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে। রাশিদা যাতে আত্মহত্যা করতে না পারে সে ব্যাপারেও কারা কর্তৃপক্ষকে বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রাশিদা চৌধুরীর মামলার পরবর্তী তারিখ হচ্ছে ১০ সেপ্টেম্বর। আইনজীবীরা উল্লেখ করেন, মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে ২৫ বছর থেকে আজীবনের দন্ড হতে পারে তার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুই বেডরুমের এপার্টমেন্টে রাশিদার দেবর থাকেন। সাথে দেবরের স্ত্রী এবং তাদের ৩ এবং ৮ বছর বয়সি আরো দুটি শিশু বাস করে। অর্থাৎ দুই বেডরুমের বাসায় সন্তানসহ রাশিদারা তিনজন ও দুই সন্তানসহ দেবরের পরিবারের চারজন বাস করতেন। ৪০ বছর বয়সি রিজোয়ানের সাথে ২১ বছর বয়েসী রাশিদার বিয়ের বিষয়টিও অনেকে বিশ্লেষণ করছেন। রিচমন্ডহীল এলাকায় বাংলাদেশি এ পরিবারটি নবাগত বিধায় প্রতিবেশীরাও তেমন কোন তথ্য দিতে পারেননি। তবে নিউইয়র্কে জীন-ভুতের আছর পড়ার বিষয়টিকে কেউই আমলে নিচ্ছেন না। অধিকাংশ প্রবাসীই মনে করছেন যে, অন্য কোন কারণে বিষন্নতায় আক্রান্ত হতে পারেন রাশিদা চৌধুরী। তা থেকেই মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হওয়াও অস্বাভাবিক নয় বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন।
'তবে শয়তানের কবল থেকে শিশুকে বাঁচাতে ছুড়ে ফেলে দিয়েছি'- রাশিদার এ মন্তব্য নিয়েও বিশ্লেষণ চলছে। এই শয়তান বলতে রাশিদা কী বোঝাতে চাইছেন সেটা একটা বড় প্রশ্ন হয়ে সামনে দাঁড়িয়েছে।
এ মামলার তদন্ত করছে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ১০২ প্রেসিঙ্কটের ডিটেকটিভ স্কোয়াড এবং কুইন্স হোমিসাইড স্কোয়াডের ডিটেকটিভরা।
বিডি-প্রতিদিন/১৪ আগস্ট,২০১৫/ এস আহমেদ