ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত ‘জাতীয় শোক দিবস’-এর অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। এক পর্যায়ে একজনের মাথা ফেটে যায়। আহত যুবলীগ কর্মী রাজুকে নিকটস্থ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
পরে পুলিশ এসে দু’জনকে নিকটস্থ থানায় নিয়ে যায়। এদের একজনের নাম জি আই রাসেল। তিনি ভার্জিনিয়া স্টেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৪০তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দূতাবাস ভবনে ‘বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে’ শনিবার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় এমন অপ্রীতিকর ঘটনায় উপস্থিত সুধীজন বিস্ময়ে হতবাক হন। তবে পুলিশের হস্তক্ষেপের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং যথারীতি অবশিষ্ট অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার পর সকলের মধ্যে তবারক বিতরণও করা হয়।
এ প্রসঙ্গে দূতাবাসের প্রেস সেক্রেটারি শামীম আহমদ শনিবার গভীর রাতে বলেন, ‘একজন বক্তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উত্তেজনা সৃষ্টি এবং এক পর্যায়ে মারপিটের উদ্ভব হয়েছিল। তবে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং অনুষ্ঠান যথারীতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ‘সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্টজনেরা ছিলেন এ অনুষ্ঠানে। মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই সবকিছু চলছিল। আলোচনার এক পর্যায়ে ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট শেখ সেলিম কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেন যে, ‘কয়েক মাস আগে পর্যন্ত যারা জামাত-বিএনপির কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের যারা এই ওয়াশিংটন ডিসিতে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন, তারাও এখন বঙ্গবন্ধুর দরদী সেজেছেন এবং এই অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রণ পেয়েছেন।’
শেখ সেলিম আরও অভিযোগ করেন, ‘দিনে আওয়ামী লীগ এবং রাতে জামাত-শিবির-বিএনপির সঙ্গে দহরম-মহরম করেন, তারা এখন এই ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকায় আওয়ামী রাজনীতির কর্ণধারে পরিণত হয়েছেন। এমন বর্ণচোরাদের চিহ্নিত না করার খেসারত দিয়েছেন জাতির জনক নিজের জীবনের মধ্য দিয়ে।’ শেখ সেলিমের এ ধরনের বক্তব্যে আপত্তি জানান যুবলীগের একজন কর্মী। আর তা থেকেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগের নেতা-কর্মীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনাও ঘটে ।
ওয়াশিংটন মেট্রো আওয়ামী লীগের একজন নেতা গভীর রাতে জানান, ‘মেট্রো ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি মাহমুদুন্নবী বাকির সঙ্গে ভার্জিনিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সেলিমের দীর্ঘ বিরোধের জের হিসেবে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে-যা খুবই দুঃখজনক।’
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন পুলিশ ডাকতে বাধ্য হন। কূটনৈতিক এলাকায় সার্বক্ষণিক টহলরত পুলিশ দ্রুত সেখানে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। পুলিশ আসার আগেই যুবলীগের একজনের মাথা ফেটে যায় আরেকজনের চেয়ারের আঘাতে। তার নাম রাজু। তাকে পুলিশের অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।’ এর ফলে শোক দিবসের অনুষ্ঠানের মেজাজ আর অটুট ছিল না বলে অনেকে মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানের বক্তারা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের ৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় নেতৃত্ব সম্পর্কে বক্তারা আলোকপাত করেন এবং বলেন, ‘বাঙালির মুক্তির জন্যে বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’
এ শোক সমাবেশ শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্মভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। উপস্থিত সকলে কালো ব্যাজ ধারণ করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও সাংবাদিক আনিস আহমেদ বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা চমৎকার একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এরপর ভয়েস অব আমেরিকার সিনিয়র সাংবাদিক সরকার কবীরুদ্দিন বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৬ আগস্ট, ২০১৫/ রশিদা