২৫ জানুয়ারি, ২০১৬ ১২:২০

বিদেশি অর্থে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি ক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে অভিযান

বাংলাদেশিদের দিকেও সন্দেহের তীর

নিউইয়র্ক থেকে এনআরবি নিউজ:

বিদেশি অর্থে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি ক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে অভিযান

কোনো ধরনের ঋণ না দিয়ে পুরো অর্থ নগদে পরিশোধ করে বাড়ি ক্রয়কারিদের হদিস উদঘাটনের পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় তথা ট্রেজারি ডিপাটমেন্ট। বিদেশ থেকে বেআইনিভাবে তথা হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ আমদানি ঠেকানোর অভিপ্রায়ে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের সূত্রে জানা গেছে। 

শুরুতে নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটান এবং ফ্লোরিডার মায়ামি-ডেড কাউন্টিকে টার্গেট করা হয়েছে। এ দুটি স্থানে বিলাসবহুল এবং বহুতল বাড়ির মূল্য সবচে' বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু বাড়ি বেচা-কেনা হয়েছে নগদ মূল্যে। ক্রেতার পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে। এমনকি অর্থের উৎসও প্রকাশ করা হয়নি। এ নিয়ে এতদিন কারো মাথা ব্যথা ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে বিপুল পরিমাণের নগদ অর্থের বিনিয়োগ ঘটায় কর্তৃপক্ষ বিচলিত বোধ করছে এ অর্থের উৎস নিয়ে। নাম সর্ব¯^ কোম্পানী খুলে তার বিপরীতে এসব বাড়ির দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। এসব তথ্য উদঘাটনের জন্যে দলিল সম্পাদনে সম্পৃক্ত সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছেন রিয়েল এস্টেট এজেন্ট, আইনজীবী, ব্যাংকার এবং কর্পোরেশন প্রস্তুতে সহায়তাকারী। 

গত বছর নিউইয়র্ক টাইমসে এ সম্পর্কে বেশ কটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিদেশে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে তা দিয়ে বিরাট অট্টালিকা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের মালিক হওয়া যাচ্ছে-সে ধরনের উদ্বেগজনক ও চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করে নিউইয়র্ক টাইমস। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় অর্থ পাচার করে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দার স্ট্যাটাসও নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

নগদ অর্থে বাড়ি ক্রয়ের সময় কোন পক্ষই সে অর্থের উৎস নিয়ে মাথা ঘামাতে পারে না। এ ব্যাপারে কোন আইনি জটিলতাও নেই। আর এ সুযোগটিই নিচ্ছে বিদেশের দুর্নীতিবাজ, চোরাচালানি অথবা মাফিয়া চক্র। তারা কাড়ি কাড়ি ডলার এনে যুক্তরাষ্ট্রে বাজারজাত করছে। এহেন অবস্থাকে মেনে নেয়া যায় না বলে মনে করছে ফেডারেল প্রশাসন। 

মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্কের পরিচালক জেনিফার সাষ্কী ক্যালভেরি গভীর উদ্বেগের সাথে উল্লেখ করেন, কালো টাকা যুক্তরাষ্ট্রের রিয়েল এস্টেট সেক্টরে গচ্ছিত রাখার এমন প্রক্রিয়াকে চলতে দেয়া উচিত হবে না। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আইনের শাসন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত যে অবস্থান তা অটুট রাখা সম্ভব হবে না। তাই বেআইনিভাবে অর্থ বিনিয়োগের ব্যাপারে সজাগ হতেই হবে। এ জন্যেই বিশাল অট্টালিকার মূল্য নগদে পরিশোধ করা হয়েছে-এমন সকল দলিল পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ে দায়িত্ব পালনকারি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে অবিলম্বে ক্রেতার বিস্তারিত পরিচয় ও আয়ের উৎস ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টে জমা দেয়ার জন্যে। এরপর ঐসব তথ্য ফেডারেল প্রশাসনের ডাটাবেইজে সংরক্ষণ করা হবে। আইন শৃক্সখলা রক্ষাকারি কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখবে ব্যাপকভাবে। 

জানা গেছে, বিশাল অংকের সম্পৃক্ততা উদঘাটিত হবে এ প্রক্রিয়ায়। নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটানে ৩ বিলিয়ন ডলারের অধিক মূল্য নগদে পরিশোধিত হয়েছে এসব দলিল ও ক্রেতার বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। অপরদিকে, ফ্লোরিডার মায়ামী-ডেড কাউন্টিতে এক মিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থ নগদে পরিশোধিত হয়েছে-এমন বাড়ির দলিল ও ক্রেতার যাবতীয় তথ্য প্রদান করতে হচ্ছে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টে। গত বছরের শেষার্ধে ম্যানহাটানে ১০৪৫টি আবাসিক ভবন বিক্রি হয়েছে যেগুলোর প্রতিটির মূল্য ৩ মিলিয়ন ডলারের অধিক ছিল। অর্থাৎ সর্বমোট সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার নগদে পরিশোধিত হয়েছে। রিয়েল এস্টেট ডাটা কোম্পানি ‘প্রপার্টি শার্ক’ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

এদিকে, সে সময় ম্যানহাটানে এক বাংলাদেশিও একটি বহুতল ভবন নগদ মূল্যে ক্রয় করেছে বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশের অনেক রাজনীতিকও গত দেড় বছরে নিউইয়র্ক, ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, নিউজার্সী অঞ্চলে বিপুল অর্থের বিনিয়োগ ঘটিয়েছেন বাড়ি ও ব্যবসা ক্রয়ের মাধ্যমে। বেশ কিছু আমলাও এ ধরনের বিনিয়োগে জড়িত বলে প্রবাসীদের মধ্যে কানাঘুষা রয়েছে। 

এ দুটি স্থান অর্থাৎ ম্যানহাটান এবং ফ্লোরিডার তথ্য পাবার পর মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট যদি দেখতে পায় যে, বড় রকমের হুন্ডির ঘটনা তথা সন্দেহজনক অর্থের বিনিয়োগ ঘটেছে, তাহলে সারা আমেরিকায় প্রসার ঘটানো হবে এ প্রক্রিয়া। 

এফবিআইয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা প্যাট্রিক ফেলোন বলেছেন, নাম গোপন রাখার যে বিধি চালু রয়েছে তাকে যদি অপব্যবহার করে বেআইনী অর্থ বিনিয়োগের ঘটনা উদঘাটিত হয় তাহলে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের এ অভিযান ফলপ্রসূ হবে। হুন্ডির ব্যবসা বন্ধে এটি হবে বড় ধরনের একটি উদ্যোগ। এফবিআইয়ের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম সেকশনের প্রধান প্যাট্রিক ফেলোন আরো উল্লেখ করেন, এখন সময় হচ্ছে বেআইনিভাবে অর্জিত অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের রিয়েল এস্টেট সেক্টরে বিনিয়োগের পথ রুদ্ধ করার। 

নিউইয়র্ক টাইমসের অনুসন্ধানকালে আরও উদঘাটিত হয়েছে যে, ম্যানহাটানের সেন্ট্রাল পার্ক, টাইম ওয়ার্নার সেন্টার এবং আরো কয়েকটি স্থানে বিলাসবহুল বাড়ি নগদ অর্থে ক্রয়কারিদের মধ্যে যারা নাম গোপন রেখেছেন তাদের অন্যতম হলেন রাশিয়ার কয়েকজন সিনেটর, কলাম্বিয়ার সাবেক গভর্ণর, বৃটিশ অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনেরা। এসব বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত চলছে বলেও টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ফ্লোরিডার বোকারেটনে কন্ডোমনিয়ামের গোপন দলিল করা হয়েছে মেক্সিকোর শীর্ষস্থানীয় এক গৃহায়ন কর্মকর্তার নামে। 


বিডি-প্রতিদিন/ ২৫ জানুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর