মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ সদর দপ্তর ও জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ভারত, কিউবা, চীনসহশতাধিক দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং স্থায়ী মিশনের কূটনীতিকদের সম্মানে এক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে ২৮ মার্চ মঙ্গলবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবিস্মরণীয় নেতৃত্বে বাঙালি জাতি কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা আদায়ে সক্ষম হয়-তা বিস্তারিত অবহিত করার পাশাপাশি পাক হানাদারদের বর্বরতার তথ্যও সবিস্তারে উপস্থাপন করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু এ অনুষ্ঠানে অতিথিদেরকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বাঙালি জাতির মহান স্বাধীনতার রূপকার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ, দু’লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী বন্ধুদের সহযোগিতার কথাও তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।
সমবেত বিদেশী কূটনীতিক এবং জাতিসংঘ সদর দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সামনে বাঙালির ইতিহাস, আবহমান ঐতিহ্য ও সূদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা তুলে ধরে স্থায়ী প্রতিনিধি আরো বলেন, “স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আমাদের আত্মপরিচয় অর্জনের দিন”।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশের জনগণের উপর ঘটে যাওয়া ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত, নিষ্ঠুর ও নিকৃষ্টতম গণহত্যার স্মরণে বাংলাদেশ ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে মর্মে তিনি উপস্থিত অতিথিদের জানান। ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে জাতিসংঘে রেজ্যুলেশন পাশে সকল রাষ্ট্রের আন্তরিক সমর্থন প্রত্যাশার কথাও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মোমেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষে জাতিসংঘের এ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল মিরোসলাভ জেনকা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেওয়া মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজের বাণী পড়ে শোনান। অনুষ্ঠানটিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ভারত, কিউবা, চীন, কুয়েত, মিশর, আলজেরিয়া, শ্রীলংকা, ইতালী, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ জাতিসংঘে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের স্থায়ী মিশনের দুইশতাধিক কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন।
পালতোলা নৌকা, নক্সীকাঁথা, জামদানি, অলঙ্কারসামগ্রী, মৃৎশিল্প সামগ্রী, গরুর গাড়ী, রিক্সা, বাঙালির ঐতিহ্যবাহী দেশী পোশাক পরিহিত বিভিন্ন ধরনের পুতুল, জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বাঙালির আত্মপরিচয় সমৃদ্ধ বইসহ বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য ও আনুষ্ঠানিকতায় মুগ্ধ হন বিদেশী কূটনীতিক ও তাঁদের পরিবার।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে মেহমানদের আপ্যায়ন করা হয়। পুরো সময় জুড়ে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবে বাজানো হয় মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কালজয়ী গানগুলি। নিউইয়র্কের মাটিতে বসে, অভ্যাগত বিদেশী অতিথিদের সামনে একটুকরো বাংলাদেশকে তুলে ধরতে স্থায়ী মিশনের এ প্রয়াসের ভূয়সী প্রশংসা করেন জাতিসংঘকে ঘিরে গড়ে ওঠা গোটা কূটনীতিক পাড়ার ভিন্নদেশী ভিন্নভাষী এই মেহমানেরা। বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তা ও তাঁদের স্ত্রী ছাড়াও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের কর্মকর্তা ও তাঁদের স্ত্রী এবং জাতিসংঘে কর্মরত বাংলাদেশের কর্মকর্তা ও তাঁদের স্ত্রীরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
বিডি প্রতিদিন/২৯ মার্চ ২০১৭/হিমেল