মহান শহীদ দিবস তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মরণে বহুজাতিক এক সমাবেশ হলো নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেট মিলনায়তনে। দিবসটির তাৎপর্য-আলোকে বিস্তারিত আলোচনা শেষে অনুষ্ঠিত ভাষাভিত্তিক একটি বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় বাংলাদেশ ফাইন আর্টস একাডেমী (বাফা) এবং বুলগেরিয়া, ভারত, কসোভো, লিথুনিয়া, মেক্সিকো, নেপাল, নাইজেরিয়া এবং ফিলিপাইনের শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন। নৃত্য-গীতে উদ্ভাসিত হয় মাতৃভাষার প্রতি বাঙালির গভীর মমত্ববোধের অবিস্মরণীয় ঘটনাবলি। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এ সভার শুরুতেই দিবসটির উপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
কনসাল জেনারেল মো. শামীম আহসান এনডিসি তার বক্তৃতায় বলেন, দিবসটি সারাবিশ্বে ভাষার বৈচিত্র্য উদ্যাপনের একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদ ছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান তুলে ধরার সাথে সাথে ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তাঁর বাংলায় বক্তব্য প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করেন। ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, এই আন্দোলনের ধারাবাহিক অর্জনই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা (Keynote Speaker) বিখ্যাত থিংকট্যাংক এসআইএল ইন্টারন্যাশনাল (SIL International) এর সাবেক প্রধান নির্বাহী এবং ভাষা বিশেষজ্ঞ ড. ফ্রেডরিক এ. বসওয়েল (Dr. Fredrick A. Boswell) ভাষা রক্ষায় সকলকে একযোগে কাজের উদাত্ত আহ্বান জানান।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনার প্রধান বক্তাকে শুভেচ্ছা-স্মারক প্রদান করছেন সস্ত্রীক কন্সাল জেনারেল।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক খান এমপি। তার বক্তৃতায় তিনি ভাষা শহীদদের অবদানের পথ ধরে দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বঙ্গবন্ধুর ''সোনার বাংলা'' বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উত্তরাঞ্চলের পরিচালক ব্রুক ই নোবেল (Ms. Brooke E Knobel), যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশি-আমেরিকান শিল্পীরা।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাষাগত বন্ধনের একটি অনন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে বক্তারা অভিমত পোষণ করেন। একুশের চেতনায় বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ থাকারও উদাত্ত আহ্বান জানান বক্তারা।
সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম, ফখরুল ইমাম, আনোয়ারুল আবেদীন খান, মো. আইনুদ্দিন এমপি এবং বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. আব্দুর রব হাওলাদারও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে লিথুনিয়ার শিল্পীরা।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি অনিন্দিতা কাজী ও তার স্বামী শাহীন তরফদারের যৌথ আবৃত্তি অতিথিদের মুগ্ধ করে। মার্কিন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের কনসাল জেনারেলসহ কূটনীতিকবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ কম্যুনিটির নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে ছিলেন। পরিশেষে ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি খাবারে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে মেক্সিকোর শিল্পীরা।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি কনস্যুলেট জেনারেলে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা অর্ধনমিত করা হয় এবং দিবসটি উপলক্ষে প্রেরিত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা ও দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/মাহবুব