মানবদেহে কিছু সাধারণ খাবারের মাধ্যমে রক্তে প্রোটিনের (alpha-2-macroglobulin-A2M) স্বাভাবিক পরিমান বজায় রেখে সুস্থ জীবন-যাপনের অসাধারণ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছেন আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. মোহাম্মদ মুনির হোসন খান।
তিনি আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়া এবং চিলড্রেনস হসপিটাল অফ ফিলাডেলফিয়ায় ফ্যাকাল্টি পজিশন নিয়ে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত। তার দীর্ঘ ৩০ বছরের বৈজ্ঞানিক গবেষনায় তিনি দেখিয়েছেন মানবদেহে রক্তে এই A2M প্রোটিনের পরিমান কম থাকলে কোনো না কোনো অসুখ শুরু হতে থাকে। কারণ বেশিরভাগ অসুখ শুরু হয় প্রায় ৫০০ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ (protease) এর কোনো না কোনো একটি বা একাধিক protease (অতিরিক্ত পরিমান) এর বিষক্রিয়ার কারণে। A2M এই সমস্ত অতিরিক্ত protease কে মানবদেহের অজান্তেই সর্বক্ষণ শরীর থেকে প্রতিনিয়ত বের করে দিয়ে মানবদেহকে সুস্থ রাখে।
তিনি জানিয়েছেন, সৃষ্টিকর্তা এই A2M দিয়েছেন প্রাণীজগতের সমস্ত প্রাণীর মাঝে একটি জীবন রক্ষাকারী প্রোটিন হিসাবে। জীবসৃষ্টির প্রায় শুরু থেকেই (0.6 billion years) , A2M এর উপস্থিতি সমস্ত মেরুদণ্ডী অথবা অমেরুদণ্ডী বিভিন্ন প্রাণীদের (nematodes, arthropods, mollusks, echinoderms, urochordates) মধ্যে একটি জীবন রক্ষাকারী প্রোটিন হিসাবে অবস্থান করে আসছে।
ডা. মোহাম্মদ মুনির হোসন খানের উদ্ভাবিত কিছু সাধারণ এবং সহজলভ্য খাদ্যতালিকা (A2M-ShopAnn System) অনুসরণ করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় ১৫০ জন (৩০–৮২ বৎসর) গত ৫ বৎসর যাবত সম্পূর্ণ সুস্থভাবে জীবনযাপন করছেন।
ডা. মোহাম্মদ মুনির হোসন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আশ্চর্য ভাবে এদের কারোরই কোন রকম শারিরীক সমস্যা যেমন জর, শর্দি অথবা কাশিও হয়নি। অথচ ৫ বৎসর আগে এদের মধ্যে বেশীরভাগ মানুষেরই কোন না কোন শারিরীক অসুস্থতা ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এখনো পর্যন্ত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে কোন রোগীর রক্ত পরীক্ষায় এই প্রোটিনের পরিমান দেখা হয় না।
প্রবাসী চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডাঃ মোহাম্মদ মুনির হোসন খান, স্যার সলিমুললাহ মেডিকেল কলেজ এবং মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে ১৯৮৩ সালে এম.বি.বি.এস. পাাস করে জাপানের কুমামতো ইউনিভারসিটি, স্কুল অফ মেডিসিন থেকে থেকে ১৯৯৩ সালে পিএইচডি (ইমমিউনোলজি এবং মলিকিউলার প্যাথোলজি) ডিগ্রী লাভ করেন।
পিএইচডি করে একই ইউনিভারসিটিতে ১ বছর ফ্যাকাল্টিতে থাকেন। ১৯৯৪ সালে পোস্ট ডক্টরেট ফেলোশিপ নিয়ে ইউনাইটেড স্টেট অফ আমেরিকা ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়া এবং টেম্পল ইউনিভার্সিটিতে যৌথ প্রজেক্টে এ কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়া এবং চিলড্রেন হসপিটাল অফ ফিলাডেলফিয়ায় ফ্যাকাল্টি পজিশন নিয়ে কর্মরত ছিলেন।
এ পর্যন্ত তিনি ৪৪ টি পিয়ার রিভিউ জার্নালে পাবলিকেশন এবং তিনটি বই লেখেন। বর্তমানে তিনি আমেরিকায় অবসর জীবনযাপন করছেন।
তার উদ্ভাবিত এই পদ্ধতি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ১৫০ জনের উপর প্রয়োগ করে দেখা গেছে গত পাঁচ বছরে তাদের কোন অসুখ-বিসুখ হয়নি। ইতিমধ্যে আমেরিকা ও কানাডার বিভিন্ন শহরে তার পদ্ধতি গ্রহণ করে অনেকেই উপকৃত হয়েছেন। তার গবেষণায় দেখা গেছে তার উদ্ভাবিত A2M পদ্ধতিতে নিম্নোক্ত উপায়ে প্রতিদিন সুবিধামতো সময়ে মিশিয়ে অথবা পৃথক পৃথক ভাবে খেলে শরীরে কোন রোগ থাকবে না। শর্ত একটাই, খেতে হবে কাঁচা। কোন অবস্থাতেই তাপ ব্যবহার করা যাবে না।
১। দই– ১ কাপ
২। কাঁচা রসুনের কোয়া- ২ টা কুচি করে কাটা
৩। কাঁচা আদা- কুচি করে কাটা (১ চামচ)
৪। কালোজিরা – ১ চামচ
৫। পুদিনা পাতা – ৬ টি কুচি করে কাটা
৬। মধু - আধা চামচ
৭। লবঙ্গের গুড়া - আধা চামচ
৮। হলুদের গুড়া - আধা চামচ
৯। যেকোন বেরী (Berry): Blueberry/strawberry/raspberry- ৬ টা
১০। আঙ্গুর-৬ টা
১১। খেজুর-১ টা
১২। ডুমুর (FIGS) - ১ টা- কুচি করে কাটা
১৩। ২টি লেবুর রস
১৪। ডিম ১টা
এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৩ লিটার পানি পান করতে হবে। ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। ধুমপান/যে কোন নেশা জাতিয় পদার্থ বর্জন করতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল