‘জামাত-শিবিরের এজেন্ট’ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পরপর দুটি আনন্দ-সমাবেশ পরিণত হলো বিষাদে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পাশাপাশি মারমুখি পরিস্থিতিরও অবতারণা হয়। যা শান্ত করতে পুলিশও ডাকা হয়। অন্যটি অবশ্য নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপেই শান্ত হয়েছে। ঢাকায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিমান পরিবহন চুক্তি স্বাক্ষরের সংবাদ জানার পরই স্থানীয় সময় গত বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায় ‘আনন্দ সমাবেশ’র আয়োজন করা হয়।
জনা তিরিশেক নেতাকর্মীর এ সমাবেশ শুরুর সময়েই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক সাখাওয়াত বিশ্বাস প্রশ্নের উল্লেখ করেন যে, নুরুজ্জামান সর্দার হচ্ছেন জামাত-শিবিরের সহযোগী সংগঠন বেসিকের সদস্য। তাই তাকে যেন বক্তার তালিকায় না রাখা হয়। এর আগেই এই ব্যক্তির জামাত-শিবির সম্পৃক্ততার তথ্য সংগঠনের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের কাছে দেয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এ নিয়ে বাদানুবাদ থেকে তীব্র উত্তেজনা ও হৈ চৈ শুরু হয় সেখানে। নুরুজ্জামান সর্দার এ অভিযোগ অস্বীকার করেন আগের মতোই। এ অবস্থায় সংগঠনের প্রচার সম্পাদক দুলাল মিয়া সকলকে শান্ত হবার অনুরোধ জানান। এক ধরনের উত্তেজনার মধ্যেই আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান সকলকে শান্ত হয়ে সমাবেশ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের আহবান জানান।
এর আগে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য হবার ৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে সদর দফতরের সামনে আনন্দ সমাবেশে তুমুল হৈ চৈ এবং মারদাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তখন পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ডাইভার্সিটি প্লাজায় হট্টগোলের ছবি উঠানোর সময় কানেকটিকাট থেকে আগত দুই কর্মীর রোষানলে পড়েছিলেন একজন সাংবাদিক। পরে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ অনভিপ্রেত ঐ আচরণের জন্যে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, কানেকটিকাট স্টেটে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড চালাতে অক্ষম ঐ দুই ব্যক্তি নিউইয়র্কে এসে প্রতিটি কর্মসূচিতেই নেতাকর্মীদের সাথে এমন উদ্ভট আচরণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহিউদ্দিন দেয়ান ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক। তার তত্ত্বাবধানে গঠিত কমিটির সভাপতি হয়েছেন নুরুজ্জামান সর্দার। সেই কমিটির বয়স এক দশক পেরিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় নুরুজ্জামান সর্দারকে জামাত-শিবিরের এজেন্ট হিসেবে অভিহিত করার ঘটনায় অনেকে হতবাক হলেও মহিউদ্দিন দেওয়ানের কাছে আনুসঙ্গিক তথ্য রয়েছে বলে গণমাধ্যমকে আগে থেকেই জানিয়ে আসছেন। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ ব্যতিত নুরুজ্জামান সর্দারকে অব্যাহতি বা বহিষ্কারের কোন এখতিয়ার যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেই।
এ অবস্থার অবসানে অবিলম্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন আহবায়ক কমিটির কথা ভাবছেন সাধারণ সদস্যরা। তা না হলে সামনের কর্মসূচিতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির আশংকাও করছেন নেতৃবৃন্দ।
হৈ চৈ আর বাদানুবাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই আনন্দ-সমাবেশে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বিমান চলাচল চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য করেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান ও আব্দুল হাসিব মামুন, প্রচার সম্পাদক দুলাল মিয়া হাজী এনাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাখাওয়াত হোসেন বিশ্বাস ও নুরুজ্জামান সর্দার ।
উল্লেখ্য, ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে একটি বিমান পরিবহন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এখন থেকে এই চুক্তি দুটি দেশের মধ্যে বিমান চালনা পুনরায় শুরু করার প্রাথমিক ভিত্তি হিসাবে কাজ করবে। চুক্তি অনুসারে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই কোড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করতে সক্ষম হবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার স্ব স্ব সরকারের পক্ষে ঢাকায় এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ ঘটনার মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনার প্রবাস প্রীতির আরেকটি নজির স্থাপিত হলো বলে আওয়ামী লীগের সভাপতি উল্লেখ করেন। নিউইয়র্ক-ঢাকার মধ্যে বিমানের ফ্লাইট পুনরায় চালুর অঙ্গীকার ছিল শেখ হাসিনার।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক