অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুখোমুখি হওয়া পোল্যান্ড প্রবাসী ইকবাল ও জাহিদকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে পোল্যান্ডে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস। তবে দুর্ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগীসহ কেউ দূতাবাসে যোগাযোগ করেনি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বরং দূতাবাসকে দোষারোপ করে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্ট থেকেই বিষয়টি প্রথম নজরে আসে দূতাবাসের। নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রদূত নিজেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে খোঁজ খবর শুরু করেন। ভূক্তভোগীদের আইনিসহায়তা দেন এবং দূতাবাসের কারও কোনও গাফিলতি আছে কি না সে সম্পর্কে সপ্তাহব্যাপী তদন্ত চালান। তদন্তে এই ঘটনা সম্পর্কে দূতাবাসে বাংলাদেশি বা পোলান্ডের কারও কোন ধরনের যোগোযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পোল্যান্ড প্রবাসীদের সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ জুলাই ইকবাল ও জাহিদ নামের দুই প্রবাসী বাংলাদেশি বাড়ি বদল করার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে। তারা ভুলক্রমে পাশের ফ্লাটের দরজা চাবি দিয়ে খোলার চেষ্টা করায় প্রতিবেশি ডাকাত সন্দেহে পুলিশে ফোন করে। পরবর্তীতে পুলিশ সাদা পোশাকে এসে তাদের স্থানীয় ভাষায় জিজ্ঞাসাবাদ এবং বেদম প্রহার করে। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের স্থানীয় ক্রাকোভ-৫ নং থানায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ কর্তৃক জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ সিদ্ধান্তে আসে যে, ভুক্তভোগী আসলে কোনও অপরাধ করেনি, তাই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় কয়েকটি পোলিশ পত্রিকা বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। সেখানে কোথাও বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়নি।
পরে গত ১০ জুলাই বাংলাদেশ কমিনিউটি, পোল্যান্ড-এর ফেসবুক পেজের এক পোস্টে ইকবাল ও জাহিদকে সহায়তা না করার অভিযোগ তোলা হয়। “বাংলাদেশ দূতাবাস ওয়ারশ কাদের সাহায্য করার জন্য” শিরোনামের পোস্টটি দূতাবাসের নজরে আসে। দূতাবাসের নজরে আসা মাত্র দূতাবাস ফেসবুক পেজের সূত্র ধরে ভুক্তভোগী বাংলাদেশিদের সাথে যোগাযোগ করে আইনি ও অন্যান্য সহায়তা করে।
পাশাপাশি ফেসবুক পোস্টে তোলা অভিযোগের বিষয়েও তদন্ত শুরু করে দূতাবাস। ফেসবুক পেজে উল্লেখ করা হয় যে, পোলিশ পত্রিকা থেকে দূতাবাসে খোঁজ নেওয়া হয়।
তদন্তে দেখা যায়, ‘Gazeta Krakowska’ নামে পোলিশ পত্রিকায় বিষয়টি ৮ জুলাই প্রকাশিত হয়। দূতাবাস পত্রিকা অফিসে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের সাথে যোগাযোগ করে। সাংবাদিক লিখিতভাবে জানান যে, তারা সোস্নভিজ-এ অবস্থিত বাংলাদেশের অনারারি কনস্যালের অফিসে যোগাযোগ করেন। অনারারি কনস্যাল দেশের বাহিরে অবস্থান করছে বিধায় তাদের পক্ষে এ বিষয়ে কোনও সাহায্য করা সম্ভব নয় বলে অনারারি কনস্যালের অফিস জানায় । রাষ্ট্রদূত অনারারি কনস্যালের নজরে এ বিষয়টি আনলে তিনি তার অফিসে যোগযোগ করেন এবং রাষ্ট্রদূতকে নিশ্চিত করেন যে, সাংবাদিক তার অফিসে যোগাযোগ করেছিলেন এবং যে উত্তর দেওয়া হয়েছে তা অনারারি কনস্যালের অফিস থেকেই দেওয়া হয়েছে।
তদন্তে বেরিয়ে আসে, ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করা হয়েছে পুলিশ অত্র দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। দূতাবাসই চিঠি লিখে সংশ্লিষ্ট ক্রাকোভ-৫ থানায় গত ১০ জুলাই যোগাযোগ করে এবং এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। পরবর্তীতে থানা থেকে দূতাবাসকে ১২ জুলাই লিখিতভাবে জানায় যে, তারা এ বিষয়ে দূতাবাসের সাথে কোনও যোগাযোগ করেনি।
পরবর্তীতে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগীদের ফ্লাটের অপর বাসিন্দা রাষ্ট্রদূতের পূর্ব পরিচিত প্রবাসী বাংলাদেশি তালহা জানান, ঘটনার আকস্মিকতায় তারা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ে বিধায় যোগাযোগ করতে পারেনি। রাষ্ট্রদূত তাদেরকে লিখিতভাবে বিষয়টি দূতাবাসকে অবহিত করতে বলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভুক্তভোগীরা ঘটনার বিবরণ দূতাবাসকে অবহিত করলে দূতাবাস পোলিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে অনুসন্ধানপূর্বক দূতাবাসকে অবহিত করতে অনুরোধ করে।
বর্তমানে ভুক্তভোগী, পুলিশের বিরুদ্ধে স্থানীয় আদালতে আইন বহির্ভূতভাবে আটক করার জন্য একটি মামলা দায়ের করেছেন। পাশাপাশি পাবলিক প্রসিকিউটর বিষয়টি তদন্তের জন্য অপর আরেকটি মামলা দায়ের করেন। মামলা পরিচালনায় ভুক্তভোগী কর্তৃক নিযুক্ত আইনজীবীকে প্রতিটি পদক্ষেপ দূতাবাসকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পোল্যান্ডে সকল কাজকর্ম তাদের নিজস্ব ভাষায় সম্পন্ন করা হয়। পাবলিক প্রসিকিউটরের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তাদের সাহায্য করার জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে দোভাষী নিযুক্ত করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে অতিসম্প্রতি এই দূতাবাসের কার্যক্রম স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রশংসিত হয়েছে। সেখানে দূতাবাসের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপপ্রচার অনভিপ্রেত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত।
বিডি প্রতিদিন/কালাম