তফাৎটা শুধু পতাকার রং আর স্লোগানে। বাকি সব কিছু প্রায় মিল। শাসকের দমনপীড়নে জনতার স্বতস্ফূর্ত বিক্ষোভ। শেষ পর্যন্ত প্রবল গণঅভ্যুত্থানের জেরে পতন এবং পলায়ন। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের পরে এবার নেপালেও দেখা গেলো একই চিত্র। চার বছরের মধ্যে ভারতের তিন প্রতিবেশী দেশে গণ আন্দোলনের জেরে হল ক্ষমতাবদল।
২০২২ সালের জুলাই মাসে আর্থিক মন্দায় থাকা শ্রীলঙ্কায় বিক্ষুব্ধ জনতার নিশানা হয়েছিল প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহের (গণরোষের জেরে গোতাবায়ার দাদা মাহিন্দা প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়ার পরে যিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন) সরকারি বাসভবনের দখল নিয়েছিল বিদ্রোহী জনতা।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের কোটা সংস্কারবিরোধী আন্দোলন রূপ নিয়েছিল দেড় দশকের শাসকদল আওয়ামী লীগবিরোধী বিক্ষোভে। স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরে তার সরকারি আবাস গণভবনেরও একই পরিণতি হয়েছিল।
ঘটনাচক্রে মঙ্গলবার নেপালি ছাত্র-জনতার রোষ আছড়ে পড়েছে সদ্য পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মার ওলির দল কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউএমএল) এবং তার সহযোগী নেপালি কংগ্রেসের সদর দফতরে। রেহাই পাননি সরকারের মন্ত্রীরাও। কারও বাসভবনে আগুন জ্বলেছে। কাউকে বা রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে জনতা। গোতাবায়া এবং হাসিনা ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। ওলি পদত্যাগ করলেও তার ‘অবস্থান’ এখনও জানা যায়নি।
নেপালি সংবাদমাধ্যমের একাংশ জানাচ্ছে, দুবাই চলে যেতে পারেন তিনি। কারণ, দেশে থাকলে তার নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বস্তুত, তিন দেশেই গণরোষের ধাঁচ হুবহু এক। জনতার নিশানায় শাসকের ঠিকানা।
সামাজিক যোগাগোগ মাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার থেকেই বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন নেপালের তরুণরা। ওই বিক্ষোভে ১৯ জন ছাত্র-জনতার মৃত্যু হয়। শেষে ছাত্র-জনতারর আন্দোলনের মুখে সোমবার রাতেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় নেপাল সরকার। কিন্তু এর পরেও বিক্ষোভ থামেনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়। একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করতে থাকে বিক্ষুব্ধ জনতা। বিক্ষোভের মুখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ওলি। মঙ্গলবার সকালেই তিনি জানিয়েছিলেন, সন্ধ্যায় সর্বদল বৈঠক করবেন। কীভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়, উদ্ভূত সমস্যার সমাধানের পথ কী, তা নিয়ে বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে তিনি আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে তার আগেই তাকে পদত্যাগ করতে হয়।
গোতাবায়া পতনের ২৫ মাস পরে গণবিক্ষোভে গদি হারিয়েছিলেন স্বৈরাচার হাসিনা। তার মাত্র ১৩ মাসের মাথাতেই হাসিনার পথেই গেলেন অলি।
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ভারত ইতোমধ্যে সহিংসতা এবং বিক্ষোভকারীদের হত্যার নিন্দা জানিয়েছে। নেপালের সঙ্গে তাদের বেশিরভাগ উন্মুক্ত সীমান্তে নজরদারিও বাড়িয়েছে। তবে, ভারতের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা ভারতেও জেন-জিদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার কোনো কারণ দেখছেন না।
নেপালে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক মঞ্জীব সিং পুরি বলেছেন, এই বিক্ষোভগুলো দেখায় যে, গণতন্ত্র শব্দটি একটি খুব আকর্ষণীয় অর্থে বেঁচে আছে এবং রাজনীতিবিদরা জনগণের কথা শুনছেন না।
তিনি বলেন, জনগণ কী চায় তা রাজনীতিবিদদের উপলব্ধি করা উচিত।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ