ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় রামন বিমানবন্দর (ইলাত-রামন বিমানবন্দর) হুতি বিদ্রোহীদের ড্রোন হামলার শিকার হয়েছে। গত রবিবার ইয়েমেনভিত্তিক এই গোষ্ঠী বিমানবন্দরে আঘাত হানে। গাজায় চলমান ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিবাদে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে হুতিরা।
লোহিত সাগরের উপকূলবর্তী পর্যটন শহর ইলাতের নিকটবর্তী এই বিমানবন্দরটি ইসরায়েলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও পর্যটন কেন্দ্র। হামলার সময় হুতিরা ইয়েমেন থেকে একাধিক ড্রোন উৎক্ষেপণ করে। এর মধ্যে একটি ড্রোন যাত্রী টার্মিনালে আঘাত হানে, যার ফলে কাচের জানালা ভেঙে পড়ে এবং দুজন ব্যক্তি হালকা আহত হন। ঘটনাটি সাময়িকভাবে বিমানবন্দরটি বন্ধ করে দেয় এবং ফ্লাইটগুলো বিলম্বিত হয়। আকাশপথে সতর্কতা জারি করা হয়।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ড্রোনটি রাডারে সনাক্ত করা হয়েছিল, তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সেটিকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। ফলে সতর্কতা সাইরেন বাজানো হয়নি এবং সময়মতো প্রতিহত করাও সম্ভব হয়নি। এর আগে একই দিনে তিনটি ড্রোন মিশর সীমান্তে প্রতিহত করা হয়।
এই ঘটনায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। আয়রন ডোমসহ রাডার-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অধিকাংশ ড্রোন থামাতে সক্ষম হলেও, একটি ড্রোনের ফাঁকি দেওয়া ইসরায়েলের জন্য একটি ‘বিরল ব্যর্থতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
হুতিদের দাবি অনুযায়ী, এই হামলা সফল এবং তারা ভবিষ্যতে আরও আক্রমণের হুমকি দিয়েছে। ইয়েমেনের হুতি-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ইসরায়েল-মার্কিন অভিযানে হুতিদের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ আল-রাহাওয়ির নিহত হওয়ার পর ধারণা করা হচ্ছিল যে, গোষ্ঠীটি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়েছে। তবে এই হামলা দেখাচ্ছে, হুতিরা এখনো আক্রমণ চালাতে সক্ষম এবং সক্রিয়।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ চলমান থাকায়, হুতিসহ ইরানঘনিষ্ঠ বিভিন্ন গোষ্ঠী এখনো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আঘাত হানছে। ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ শেষ হলেও দেশটির নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক কমেনি। রামন বিমানবন্দরের হামলা প্রমাণ করছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকি এখনও বিদ্যমান।
যদিও হামলাটি সামগ্রিকভাবে প্রতিহত করা গেছে এবং বিমানবন্দরের কার্যক্রম দ্রুত চালু হয়েছে, একটি ড্রোনের আঘাত ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় ফাঁক তৈরি করেছে। এতে হুতিদের কৌশলগত দুর্বলতা যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি ইসরায়েলের উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাও সামনে এসেছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এই হামলা ইসরায়েলি নাগরিকদের মনে নতুন করে নিরাপত্তা শঙ্কা জাগিয়েছে।
তথ্যসূত্র : ইরান ইন্টারন্যাশনাল ও দ্য টাইমস অব ইসরায়েল।
বিডি-প্রতিদিন/শআ