দোহা, কাতার অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলি হামলার ধাক্কা নতুন নয়, তবে এবার ভিন্ন চিত্র। মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের বিমান হামলার ঘটনায় চমকে উঠেছে বিশ্ব। কাতারের ওয়েস্ট বে লেগুন এলাকায় চালানো ওই হামলায় নিহত হন হামাসের পাঁচজন নিম্নপদস্থ সদস্য ও কাতারের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা।
এটি চলতি বছরে ইসরায়েলের ষষ্ঠ বিদেশি হামলা। বিশ্লেষকদের মতে, ঘটনাটি শুধু কাতারের জন্য নয়, পুরো গালফ নিরাপত্তা জোটের জন্যই বড় ধাক্কা।
কাতারের ক্ষোভ
কাতার সরকার এ ঘটনাকে “রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ” ও “অপরিণামদর্শী অপরাধ” আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। রাশিদ আল-মোহানাদি, যিনি মিডল ইস্ট কাউন্সিল অন গ্লোবার এফেয়ার্স-এর ননরেসিডেন্ট ফেলো, বলেন, “একজন মধ্যস্থতাকারীর দেশে হামলা চালিয়ে হামাস নেতাদের হত্যা করার চেষ্টা দেখিয়ে দিল, ইসরায়েল শান্তি চায় না।”
মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় প্রশ্ন
কাতার দীর্ঘদিন ধরে গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী। তবে এবার নিজেদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে দেখে দেশটি কৌশল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে বলে মনে করছেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশন্সের ভিজিটিং ফেলো সিনজিয়া বিয়ানকো। “কাতারের প্রধান অস্ত্র হলো তাদের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা প্রত্যাহার করা। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়তে পারে,” তিনি জানান।
অর্থনৈতিক চাপ ও কূটনৈতিক পথ
রাশিদ আল-মোহানাদি বলেন, “সব বিকল্প এখন খোলা। ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ওপর অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করতে পারে কাতার।”
এদিকে সাথাম হাউজের এর পরিচালক সানাম ভাকিলের মতে, কাতারে হামলা ছিল এমন একটি ঘটনা যা “ইসরায়েলের জন্য উটের পিঠে শেষ খড় হতে পারে।”
কাতার ইতোমধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি উত্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি দেশটির কূটনীতিক মোহাম্মদ বিন আবদুল আজিজ আল-খুলাইফিকে প্রধান করে একটি আইনি দল গঠন করেছে, যারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনি পদক্ষেপ নেবে।
মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় কাতারের ভবিষ্যৎ
তবে বিশ্লেষকদের মতে, কাতার সহজে তার মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা ছাড়বে না। রাশিদ আল-মোহানাদি বলেন, “মধ্যস্থতা কাতারের সংবিধানেই লিপিবদ্ধ। এই হামলা কেবল এক ধরণের ‘ডেন্ট’, তবে মধ্যস্থতাকারী ভূমিকায় তারা অটল থাকবে।”
হামাসকে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে দোহায় হামাস নেতৃত্বকে আশ্রয় দেয় কাতার। Italian Institute for International Political Studies-এর সিনিয়র গবেষক এলেওনোরা আর্দেমাগনি মনে করেন, হামাসকে উচ্ছেদ এখনই হবে না, তবে ঝুঁকি বিবেচনায় কাতার ভবিষ্যতে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
নিরাপত্তা বৈচিত্র্য ও গালফ ঐক্য
ইরানের হামলা ও এবার ইসরায়েলের আঘাত গালফ রাষ্ট্রগুলোকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে নিজেদের প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়ানো ও নতুন নিরাপত্তা অংশীদার খুঁজবে তারা।
আল-মোহানাদি বলেন, “এ হামলা শুধু কাতারের ওপর নয়, গোটা গালফের ওপর আঘাত। এর পরিণতিতে গালফ দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যবোধ আরও জোরদার হবে।”
সোর্স: আল জাজিরা
বিডি প্রতিদিন/আশিক