দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। সেই সাথে বিপদ বাড়ছে ভারতের। বিবিসির এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্রনীতির জন্য ক্রমশই একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন। সম্প্রতি, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের পর এবার নেপালেও দেখা দিয়েছে সহিংস বিক্ষোভ। যার জেরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। এই ঘটনা দিল্লির জন্য কেন মহাচিন্তার কারণ? কেনো ভারতের কপাল ঘেমে যাচ্ছে? বিবিসি সেই বিশ্লেষণই সামনে এনেছে।
গত কয়েকদিন ধরে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু উত্তাল। সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ২০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। পার্লামেন্টে বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে। সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে।
নেপালের এই অস্থিতিশীলতা ভারতের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের। কারণ, নেপালের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক শুধু ভৌগোলিক নয় বরং ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং কৌশলগতভাবেও অত্যন্ত গভীর। প্রায় ১ হাজার ৭৫০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ এবং উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে এই দুই দেশের। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ কোনো পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়াই এই সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করে। ভারত ও নেপালের মানুষের মধ্যে রয়েছে পারিবারিক এবং অর্থনৈতিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গভীরভাবে এই পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন। এক বিবৃতিতে তিনি নেপালের সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে তার মন্ত্রিসভার সঙ্গে একটি জরুরি বৈঠকও করেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মতো নেপালের ঘটনাও ভারতকে অনেকটা অপ্রস্তুত করে দিয়েছে। কারণ, এই পদত্যাগের মাত্র এক সপ্তাহ পরেই প্রধানমন্ত্রী অলির দিল্লি সফরের কথা ছিল। নেপালের কৌশলগত অবস্থান ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে তার ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে। সামরিক বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব.) অশোক মেহতা বলেন, চীনের ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড নেপালের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত। ভারতের ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমির দিকে যাওয়ার পথ নেপালের ভেতর দিয়েই আসে।
এছাড়াও, প্রায় ৩৫ লক্ষ নেপালি ভারতে বসবাস ও কাজ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ৩০ হাজারেরও বেশি বিখ্যাত গোর্খা সৈনিক কর্মরত আছেন। নেপালে যেকোনো ধরনের অস্থিরতা এই বিশাল জনগোষ্ঠী এবং সামরিক সম্পর্কের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
ভারতের জওহরলাললাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঙ্গীতা থাপলিয়াল বলেন, নেপালে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। ভারতের উচিত নেপালি শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি ফেলোশিপ এবং চাকরির সুযোগ তৈরি করার কথা ভাবা।
নেপালের এই সংকটে ভারত এখন কূটনৈতিকভাবে সতর্ক থাকতে বাধ্য। কারণ, দেশটির তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। নেপালের এই সংকট এমন এক সময়ে এলো যখন ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে একের পর এক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো নয়, আর মিয়ানমারও গৃহযুদ্ধে জর্জরিত।
মেজর জেনারেল মেহতা মনে করেন, ভারত তার ‘গ্রেট পাওয়ার’ উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে চোখ সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু একটি স্থিতিশীল এবং সুরক্ষিত প্রতিবেশী অঞ্চল ছাড়া সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষা অর্জন করা সম্ভব নয়।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল