মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিউইয়র্কে এক নির্বাচনী সমাবেশে বললেন, ‘এখন আমরা সকলেই অনুধাবনে সক্ষম হচ্ছি যে আমাদের গণতন্ত্র মহাঝুঁকির মধ্যে নিপতিত হয়েছে। এমন অবস্থায় বর্তমান প্রজন্মকে তা রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্রকে সংরক্ষণে কাজ করতে হবে। গণতন্ত্র হচ্ছে একটি রাষ্ট্র এগিয়ে চলার চাবিকাঠি।’
মধ্যবর্তী নির্বাচনে নিউইয়র্কের স্টেট গভর্রন প্রার্থী ক্যাথি হোকুলের সমর্থনে নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসভিলে অবস্থিত সারাহ লরেন্স কলেজ মিলনায়তনে ওই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানে ক্যাথি হোকুলও ছিলেন।
উল্লেখ্য, ডেমোক্রেট অধ্যুষিত এলাকা সত্ত্বেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, অর্থনীতির নাজুক অবস্থা, অভিবাসনে হ-য-ব-র-ল অবস্থা ইত্যাদি কারণে রিপাবলিকানরা নির্বাচনী ময়দানে তুলকালাম কাণ্ড শুরু করেছেন। ভোটারেরাও ক্ষুব্ধ বাইডেনের রাষ্ট্র পরিচালনায় হ-য-ব-র-ল নীতি অনুসরণের জন্যে। এজন্যেই শেষ মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও মাঠে নেমেছেন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে। তারা ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রিপাবলিকানদেরকে গণতন্ত্রের শত্রু এবং মানবতার দুশমন হিসেবে অভিহিত করতেও দ্বিধা করছেন না।
গত নির্বাচনের ফলাফল এখনও যারা মানতে পারেনি তেমন ২৮৯ জন রিপাবলিকান এবার কংগ্রেস ও স্টেট গভর্নর পদে লড়ছেন। এরা পৃথক পৃথকভাবে গণমাধ্যমে অথবা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাথে বিতর্কের সময় উল্লেখন করেছেন যে, বিজয়ী হলেই তারা এবারের নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেবেন। অর্থাৎ পরাজয়কে তারা মানবেন না। এমন মনোভাব ব্যক্তকারীদের প্রতি ইঙ্গিত করেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং বারাক ওবামা প্রতিটি সমাবেশে গণতন্ত্র মারাত্মক ঝুঁকির মুখে বলে মন্তব্য করছেন। নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর পদে রিপাবলিকান প্রার্থী লী জেলডিন বর্তমানে কংগ্রেসে রয়েছেন। তিনি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।
বাইডেন এ সমাবেশে লী জেলডিনের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘এমন ব্যক্তিরা ভোটারের অধিকারই শুধু কেড়ে নিতে চায় না। তারা প্রদত্ত ভোট গণনাতেও বিশ্বাসী নন। ওদের ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।’
বাইডেন উল্লেখ করেন, আমার সারাজীবনের রাজনীতিতে এমন আচরণ দেখিনি। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে সহিংসতাকে উস্কে দেয়ার মতো পরিস্থিতিও স্মরণকালে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নির্বাচনেই দেখিনি।
অতি সম্প্রতি কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির বাসায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকেও ট্রাম্পের লেলিয়ে চরমপন্থিদের কাজ বলে মন্তব্য করেন।
মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদের সবকটি আসনে (৪৩৫), ইউএস সিনেটের ৩৫ এবং স্টেট গভর্নরের ৩৬ আসনে ভোট গৃহীত হবে মঙ্গলবার। সর্বশেষ বিভিন্ন জরিপে কংগ্রেস এবং স্টেট গভর্নর পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। অর্থাৎ কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের আধিপত্য ডেমক্রেটরা অটুট রাখতে সক্ষম হলেও সিনেটের নেতৃত্ব হারাতে পারে। একইভাবে স্টেট গভর্নরের দুয়েকটি আসনও হারাতে পারে ডেমোক্রেটরা। এ অবস্থায় নির্বাচনী ময়দানে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। আগেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। ভোট গ্রহণের সময় মধ্যযুগীয় কায়দায় সহিংসতার আশঙ্কা ব্যক্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে অনেকে সিটিতে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও আগের মতোই নির্বাচনী ময়দানে উত্তেজনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন গত কদিন। সবকিছু মিলিয়ে একেবারেই অচেনা এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সারা আমেরিকায়।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা