সিলেটের ঐতিহ্য আলোকে ৩০ রকমের পিঠার মৌ মৌ সুগন্ধিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল বহুজাতিক নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসের অলি-গলি। পিঠার আমেজে গৃহিণী আর তরুণীরাও সেজেছিলেন বাহারি পোশাকে। বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রঙ্কসের পার্কচেষ্টার এলাকায় গোল্ডেন প্যালেসে ২৩ ফেব্রুয়ারি রবিবারটি পরিণত হয়েছিল একখন্ড সিলেটে। সকল বয়সী নারী-পুরুষের সাথে ছিলেন ভিনদেশিরাও। সবকিছু মিলিয়ে আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য পিঠা-পুলির সঙ্গে সেলফি তুলে পিঠা খাওয়ার দৃশ্যকে স্মৃতিময় করে রাখার চেষ্টাও ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক’র উদ্যোগে বৈচিত্রমন্ডিত এ আয়োজনে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামীম আহমেদ সভাপতিত্ব করেন এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিমের পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম। এ সময় সোসাইটি সভাপতি সেলিম বলেন, পিঠা বাঙালির চিরায়ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। শীত আর পিঠা একে অপরের পরিপূরক। গ্রাম-বাংলার মা, চাচি, খালা, বোন, ভাবিদের চিরায়ত সেই ঐতিহ্য আমাদের প্রবাস জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে। আবহমান বাংলার সেই ঐতিহ্যকে তুলে ধরার লক্ষ্যে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। এরকম অনুষ্ঠান আরো বেশি বেশি আয়োজনের জন্যে উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে তিনি অনুরোধ জানান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে এসময় আরো ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটি সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলী, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের বোর্ড অব ট্রাস্টি বদরুন নাহার খান মিতা, ছদরুন নুর, সৈয়দ নাজমুল হাসান কুবাদ, সাবেক বোর্ড অব ট্রাস্টি আব্দুস সহিদ, তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহমেদ জিল্লু, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন সুহাগ, মৌলভীবাজার ডিস্ট্রিক্ট সোসাইটির সভাপতি সোহান আহমেদ টুটুল, সাবেক সভাপতি তজুমুল হোসেন, হবিগঞ্জ সদর সমিতির সভাপতি মিয়া মোঃ আছকির, সুনামগঞ্জ জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোতাহের রুবেল, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক নির্বাচন কমিশনার একে এম কামাল, সাবেক সহ-সভাপতি সাব্বির হোসেন, কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট সাইকুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সহ-সভাপতি জোসেফ চৌধুরী, গীতা পাঠ করেন কবি সুধাংশু মন্ডল। বাংলাদেশের ও আমেরিকার জাতীয় সংগীতও পরিবেশন করা হয়। উৎসবে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিঠা উৎসব এর আহবায়ক মোঃ জাবেদ উদ্দিন, সদস্য সচিব হুমায়ুন কবির সোহেল, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি শফিউদ্দিন তালুকদার শফি প্রমুখ।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুকন হাকিম বিপুল করতালির মধ্যে উৎসবে পিঠা নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের নাম এবং পরিচয় উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে ছিলেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামীম আহমেদের সহধর্মিনী আতিকা মহসিন সুমি, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিমের সহধর্মিনী সাজনা হাকিম, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহমেদ জিল্লুর সহধর্মিনী লুৎফা জিল্লু, সাবেক সহ-সভাপতি সাব্বির হোসেনের সহধর্মিনী সাহিদা হোসেন মুক্তা, মহিলা উদ্যোক্তা মাকসুদা আহমেদ, শাকিলা রুনা, ফারজানা লতিফা, সুরাইয়া আলম লাকি, মনজুরা আহমেদ অলি, তাসলিম আরা লিমা, সুলতানা আহমদ, রাহিমা বিনতে উদ্দিন, আয়েশা খাতুন, সামিয়া আক্তার, রুজি, তপতি দেবনাথ, সুস্মিতা দেব, জুলি বেগম, নাছরিন চৌধুরী, মাছুদ আহাদ প্রমুখ।
উৎসবে সিলেট সহ গ্রাম-বাংলার প্রায় ৩০ রকমের পিঠা সাজানো হয়। এর মধ্যে ছিল মালাই পিঠা, মুঠি পিঠা, কলা পিঠা, খেজুর পিঠা, ক্ষীর কুলি, গোলাপ ফুল পিঠা, পুলি পিঠা, পাতা পিঠা, পাটিসাপটা, নারকেলের সেদ্ধ পুলি, তেলের পিঠা, দুধ চিতই, ভাঁপা পিঠা, চিতই পিঠা, ঝাল পিঠা, মালপোয়া, নকশি পিঠা, দুধ চিতই পিঠা, সেমাই পিঠা, নোন পিঠা, পিঁয়াজু, চানা মুড়ি, বরফি পিঠা, গোলাপ পিঠা, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বিন্নি পিঠা উল্লেখযোগ্য।
উৎসবে পিঠা খাওয়ার পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয় গান, আবৃত্তি, অ্যাক্রোবেটিক ও পথনাটকসহ নানা অনুষ্ঠান।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামীম আহমেদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য আমন্ত্রিত অতিথিসহ সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম সকল জালালাবাদবাসী এবং উপস্থিত অতিথিবৃন্দকে উপস্থিত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং অনুষ্ঠানে কোন ধরনের ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য সকলের প্রতি আবেদন করেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ