ভাই এবং বেরাদার

আমার এক বন্ধু বলল, ভাই-বেরাদার থাকলে বিরাট সুবিধা। কী কী সুবিধা, সেটা বলে বোঝানো যাবে না। তবে উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যেতে পারে। আমি বললাম, শুধু উদাহরণ না, তুই যা দিতে চাস, দে। তবু বোঝা। আমি বুঝতে চাই। ছোটবেলা থেকেই আমার বোঝার খুব শখ। বন্ধু বলল, আসলে হয়েছে কী, বিষয়টা খুব লজ্জার। তবু না বলে পারা যায় না। না বললে ভাই-বেরাদারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হবে না। গতকাল শ্বশুরবাড়ি থেকে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। রাস্তায় একটা বিষয় নিয়ে বউয়ের সঙ্গে তর্ক বাধল। দুজনেই ছিলাম রিকশায়। তর্কের এক পর্যায়ে বউ ক্ষেপে গিয়ে করল কী, আমাকে কনুই দিয়ে মারল এক গুঁতা। গুঁতার ধকল সামাল দিতে না পেরে আমি রিকশা থেকে পড়ে গেলাম। পড়ে গিয়েই শুধু ক্ষান্ত হলাম না, গড়াতে গড়াতে চলে গেলাম রাস্তার পাশের খাদে। একটা সাঁতার না জানা লোক খাদে পড়েছে, টের পাচ্ছিস পরিস্থিতির ভয়াবহতা? আমি সত্যিই ভয়াবহতা টের পেলাম। তাই জিজ্ঞেস করলাম এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে মুক্তি মিলল। বন্ধু একপ্রস্থ হেসে বলল, ওই যে বললাম, ভাই-বেরাদার! পাশেই ছিল আমার দুই ছোট ভাইয়ের বাড়ি। তারা খবর পেয়ে দৌড়ে এসে আমাকে উদ্ধার করল। মরাল অব দ্য স্টোরি কী? মরাল অব দ্য স্টোরি হচ্ছে, বউয়ের সঙ্গে তর্কে জড়ালেও এমন এলাকায় জড়াতে হবে, যেখানে ভাই-বেরাদার আছে। নইলে রাস্তার পাশের খাদে পড়ে চুবানি খেতে হতে পারে। উল্লেখ্য, রাস্তার পাশের খাদে জোঁক, হালকা বিষধর সাপ, গুইসাপ ইত্যাদি থাকার আশঙ্কা রয়েছে। সো সাবধান। আমার এক বড়ভাই বললেন, যার ভাই-বেরাদার নেই, সে জগতের অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এক কথায় যদি বলি, তার চেয়ে হতভাগা জগতে নেই। তবে আমি খুবই লাকি। কারণ, আমার ভাই-বেরাদারেরও অভাব নেই, সুযোগ সুবিধারও অভাব নেই। আমি বললাম, কী কী সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন, যদি একটু বলতেন, বিরাট উপকৃত হতাম আরকি। বড়ভাই বললেন, সুযোগ সুবিধার তো শেষ নেই। কোনটা রেখে কোনটা বলি। ঠিক আছে, আজকের একটা সুবিধার কথাই বলি। পাড়ার চায়ের দোকানদারের সঙ্গে আমার হেভি তর্ক বেধে গেল। সে বলে চায়ে চিনি দিয়েছে, আমি বলি দেয় নাই। আমি বলি দেয় নাই, সে বলে দিয়েছে। এ নিয়ে এক পর্যায়ে হাতাহাতি বাধার মতো দশা। এর মধ্যে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেল। কিন্তু অবাক কান্ড হলো, সবাই কথা বলছিল চায়ের দোকানদারের পক্ষে। যেহেতু সে স্থানীয়। আমি তো পড়ে গেলাম বেকায়দায়। দেখলাম সবাই মিলে আমাকে ধোলাই দিতে পারে। পরিস্থিতি যখন আরও ঘোলাটে হয়ে গেল, ঠিক তখনই এসে হাজির আমার কতিপয় ভাই-বেরাদার। ব্যস, আমি জিতে গেলাম। আর প্রমাণিত হলো, আসলেই দোকানদার চায়ে চিনি দেয় নাই। আমি বললাম, তাহলে তো সংসার জীবনেও কিছু ভাই-বেরাদার থাকা দরকার আছে। যেহেতু অনেক সময় বউ তরকারিতে লবণ দেয় না। আবার স্বীকারও করতে চায় না। ভাই-বেরাদার থাকলে হবে কী, সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিচারে প্রমাণ করা সম্ভব, বউ আসলেই তরকারিতে লবণ দেয় নাই। নইলে কিন্তু বউয়ের সঙ্গে পারা যায় না। সে লবণ না দিয়েও প্রমাণ করেই ছাড়ে লবণ দিয়েছে। বড়ভাই আমার কথায় ভরসা পেয়ে বললেন, আমি তো মনে করি, ভাই-বেরাদার কোটায় নিয়োগ দেওয়ারও ব্যবস্থা থাকা উচিত। কী বলিস? আমি বললাম, সহমত ভাই। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আমি একটা জিনিস খেয়াল করলাম, ভাই-বেরাদার যদি শত্রুও হয়, তবু লাভ। আর বন্ধু হলে তো লাভের সীমাই নেই। আমি বললাম, ভাই-বেরাদার বন্ধু হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। শত্রুতার কথা আসছে কেন? প্রতিবেশী বললেন, না, মানে অনেক সময় এমন হয় না, আগে সম্পর্ক ভালো ছিল। কোনো কারণে খারাপ হয়ে গেছে। তো এই অবস্থায়ও কিন্তু ভাই-বেরাদাররা আপনাকে নানা রকম সুবিধা দিতে পারে। আমি বললাম, যেমন? প্রতিবেশী বললেন, তাহলে আমাকে দিয়েই উদাহরণ দিই। পাশের পাড়ায় আমার কিছু ভাই-বেরাদার ছিল। কিন্তু ধারের টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে তাদের সঙ্গে এখন আমার দা-কুমড়া সম্পর্ক। তারা দেখলেই আমাকে তাড়া দেয়। এ পর্যন্ত বলে প্রতিবেশী যখন থামলেন, তখন আমি বললাম, আপনাকে দেখলেই তাড়া দেয়, এখানে সুবিধার কী আছে? আমি তো শুধু অসুবিধা দেখছি, মুসিবত দেখছি। প্রতিবেশী বললেন, না রে ভাই, এখানেও সুবিধা আছে। তাদের তাড়া খেয়ে আমি দৌড়াই। এতে সুবিধা যেটা হয়েছে, আমার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। ভুঁড়িটাও মৃদু কমে এসেছে বলে অনুমান করি। কারণ, পুরনো প্যান্টগুলো আজকাল পরতে পারছি। আগে তো এমন টাইট ছিল, পরতে পারলেও চেইন লাগাতে পারতাম না।