রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ভাঁড় হিসেবে খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল গোপালের। পাড়াপড়শিরা তাই তাকে সমীহ করে চলত। একদিন এক বুড়ি এসে বলল, ‘গোপাল ভাই, আমায় একখানা চিঠি লিখে দাও না। আমার ছেলে পুরী থেকে দশ ক্রোশ দূরে নাগেশ্বরপুর গেছে। কোনো খবর পাচ্ছিনে বেশ কয়েক দিন হলো। টাকা-পয়সাও নেই যে কাউকে পাঠাব।’ গোপালের হাতের লেখা ভালো ছিল না। বুড়ির কথা শুনে গোপাল বলল, ‘আজ তো আমি চিঠি লিখতে পারব না, ঠাকমা।’
‘কেন ভাই, আজ কী যে, তুমি চিঠি লিখতে পারবে না। অনেক দিন হয়ে গেছে আজ না লিখলেও নয়। আমি বুড়ো মানুষ কার কাছে যাব চিঠি লিখতে ভাই, তুমিই একমাত্র ভরসা।’ গোপাল বলল, ‘আমার যে পায়ে ব্যথা গো ঠাকমা।’ ‘পায়ে ব্যথা তাতে কী হয়েছে? চিঠি লিখবে তো হাত দিয়ে? পায়ে কি তুমি চিঠি লিখবে নাকি। তোমার কথা শুনলে হাসি পায়। তোমার মতো এমন কথা কোথাও শুনিনি।’ বলল বুড়ি। গোপাল হেসে বলল, ‘চিঠি তো লিখব হাত দিয়েই। কিন্তু আমার চিঠি অন্য কেউ যে পড়তে পারবে না। আমার লেখা চিঠি আমাকে নিজে গিয়ে পড়ে দিয়ে আসতে হবে। আমার যে এখন পায়ে ব্যথা। এখান থেকে পুরী আবার পুরী থেকে দশ ক্রোশ দূরে নাগেশ্বরপুরে চিঠিটা তো আমি পড়ে দিয়ে আসতে পারব না। তুমি অন্য কাউকে দিয়ে চিঠিখানা এবারকার মতো লিখিয়ে নাও, ঠাকমা। আমার পা ভালো হলে চিঠি লিখে দেব এবং নিজে গিয়ে পড়ে আসব।’