পুরান ঢাকার মিটফোর্ডে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যার পেছনে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সোহাগের স্বজনরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের অভিযোগ, সোহাগের কাছে দুই ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল খুনিরা। চাঁদা না দেওয়ায় নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করেছে খুনিরা। পুলিশ জানিয়েছে, পৈশাচিক এই খুনের সঙ্গে জড়িত ১৯ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এদিকে বরগুনায় সোহাগের গ্রামে চলছে শোকের মাতম। স্বজনরা বলেন, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এখনো হত্যাকারীদের লোকজন মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। সোহাগের দুই সন্তান ১০ বছর বয়সি ছেলে সোহান ও ১৪ বছর বয়সি মেয়ে সোহানা। স্ত্রী লাকি বেগম (৩০) জানেন না, কীভাবে স্কুলপড়ুয়া এই দুই সন্তানকে সান্ত্বনা দেবেন। সোহাগ হত্যাকাণ্ডে জড়িত গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মাহমুদুল হাসান মহিন, তারেক রহমান রবিন, আলমগীর ও মনির ওরফে লম্বা মনির ও টিটন গাজী। এদের মধ্যে তারেক রহমান রবিন গতকাল হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সোহাগের মৃত্যুর পর তার লাশের ওপর উঠে উল্লাস করেছেন বড় মনির ও ছোট মনির। লাশের ওপর পাথর মেরেছেন মনির ওরফে লম্বা মনির ও আলমগীর। এ ছাড়া গ্রেপ্তার মাহমুদুল হাসান মহিন হচ্ছেন এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী।
গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে লালবাগ বিভাগের ডিসি মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘ওই এলাকায় ভাঙারি ব্যবসা খুব প্রচলিত। সেখানে একটি ভাঙারি দোকান ছিল। সেই দোকানে কারা ব্যবসা করবে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। আমরা জানতে পেরেছি, যিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে তারা পরস্পর পরিচিত। ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী সোহাগের বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এ ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করি এবং এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটা অপরাধ হলে কে অপরাধী সেটা বিবেচনা করে পুলিশ মামলা তদন্ত করে। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়।’ তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজির বিষয়টা আমাদের জানা নেই। আমরা যতটুকু জেনেছি, এটা পারস্পরিক দ্বন্দ্বের বিষয়।’ সোহাগের স্ত্রী বলেছেন, তার স্বামীর কাছে হত্যাকারীরা ভাঙারি ব্যবসায় তাদের শেয়ার করা না হলে মাসিক ২ লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করে আসছিল। সোহাগ তাদের এই দাবি না মানায় ৯ জুলাই প্রকাশ্যে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। গতকাল সোহাগের গ্রামের বাড়ি বরগুনার ঢলুয়া ইউনিয়নের বান্দরগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের আয়োজিত মানববন্ধন শেষে তিনি এ কথা বলেন। তিনি এ সময় আরও বলেন, সংসারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন সোহাগ।