এক দিন শুটিং স্পটে টানা আড্ডা চলছিল অভিনেতা রওনক হাসানের সঙ্গে। আড্ডায় একে একে উঠে এলো সালাহউদ্দিন লাভলুর সঙ্গে রওনক হাসানের প্রথম কাজের অভিজ্ঞতা, প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে নির্মাতা-অভিনেতা তৌকীর আহমেদের ‘জয়যাত্রা’য় যুক্ত হওয়ার গল্পসহ হুমায়ুন ফরীদির নানা অজানা কথা। রওনক হাসান সেদিন হুমায়ুন ফরীদিকে নিয়ে কথার ঝাঁপি খুলে বসলেন। বললেন, ‘ফরীদি ভাই ছিলেন অন্য লেভেলের মানুষ। তাকে কনভিন্স করা সবার কাছে খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। তিনি কারও দ্বারা কখনো প্রভাবিত হতেন না। একবার তৌকীর ভাই তার সিনেমা ‘জয়যাত্রা’র জন্য ফরীদি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করলেন। একটি চরিত্রে ফরীদি ভাইকে কাস্ট করতে চান।
কিন্তু সিনেমার বিষয়ে কোনো কথা না বলে তৌকীর ভাইকে নানা বিষয় নিয়ে জ্ঞান দিতে লাগলেন। ফরীদি ভাই বলতে থাকলেন, এ প্রজন্মের ছেলেরা কী আর বানাবে! বানাতে অনেক সাধনার দরকার হয়।
একটি ভালো সিনেমা বানাতে ১০০ বছরে একজন নির্মাতার জন্ম হয়। তৌকীর ভাই ধৈর্য ও মনোযোগ সহকারে সব কথা শুনে একসময় বলে উঠলেন, ‘ধরুন সেই নির্মাতা এসে গেছে। আপনার সামনেই।’ তার কথা শুনে থ বনে গেলেন ফরীদি ভাই। এমন কনফিডেন্ট খুবই পছন্দ হলো তার।
এরপর গল্প শুনলেন। বললেন, ‘ঠিক আছে করব। তো ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে।’ তৌকীর ভাই বললেন, ‘না পারব না।’ ‘তাহলে ৫ লক্ষ দিও’-ফরীদি ভাইকে তৌকীর ভাইয়ের ফের না সূচক বাক্য। এভাবে ৩ লক্ষ থেকে ৫০ হাজারে নেমে গেলেও তৌকীর ভাইয়ের সেই না। শেষমেশ ফরীদি ভাই বললেন, ‘তাহলে পারিশ্রমিক হিসেবে ১০১ টাকা দিও’। এবার রাজি হয়ে গেলেন তৌকীর ভাই। তবে শুনেছিলাম, তৌকীর ভাই ‘জয়যাত্রা’য় অভিনয়ের জন্য ১০১ টাকা না দিয়ে ফরীদি ভাইকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন পারিশ্রমিক হিসেবে।
রওনক হাসান আরেকটা ঘটনা বললেন হুমায়ুন ফরীদিকে নিয়ে। ‘ফরীদি ভাই যে সুপারস্টারের সুপারস্টার, সেটা শুটিং স্পটে গিয়ে দেখেছি। একবার শুটিং স্পটে স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসে আছি। হঠাৎ একজন এক জোড়া জুতা নিয়ে মেকআপ রুমে ঢুকল। এরপর ঢুকল জামা-কোট নিয়ে। এরপর ফরীদি ভাইয়ের বসার জন্য চেয়ার।
এভাবে সব শেষ হলে শেষে গাড়ি থেকে নেমে ফরীদি ভাই সুপারস্টারের মতো শুটিং স্পটে ঢুকলেন। এই হলেন ফরীদি ভাই।’
আরেকটি মজার বিষয় রওনক হাসান শেয়ার করলেন। বললেন অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদিকে নিয়ে। যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হুমায়ুন ফরীদি প্রচুর বাকি খেতেন।
তার সময়কার দোকানদাররা এখনো ওসব বাকি নিয়ে অভিযোগ নয়, বরং তারা গর্ব করেন! কথিত আছে যে, ফরীদিকে একবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে সুমন নামে একজন ঠাট্টাচ্ছলে বলেছিলেন আপনি আল বেরুনির ক্যান্টিনে ৩১৯ টাকা বাকি রেখেছেন, শোধ করে যাবেন! জবাবে তিনি উত্তর দেন, ‘আমি এইটা শোধ করব না।’ সবাই বলে উঠল, ‘কেন কেন?’
তিনি তখন উত্তরে বলেন, ‘আমি এই ক্যান্টিন, হল, ক্যাম্পাস, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মানুষগুলোর কাছে আজীবন ঋণী থাকতে চাই।’