একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রযুক্তি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বাংলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। যা যন্ত্রকে মানুষের মতো বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করতে, শিখতে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করে তুলছে। এর প্রভাব বর্তমান বিশ্বে সুদূরপ্রসারী এবং বহুমুখী। এটি সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে- যা আমাদের জীবনকে সহজ, দ্রুত এবং দক্ষ করে তুলছে...
কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা (এআই) কী?
প্রযুক্তি বিশ্বে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বাংলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয়জয়কার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিপ্লব মূলত এমন একটি পর্যায়কে বোঝায়- যেখানে এআই প্রযুক্তি শুধু গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ না থেকে দ্রুতগতিতে আমাদের দৈনন্দিন জীবন এবং শিল্প খাতে প্রবেশ করছে, এমনকি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনও এনেছে। যেখানে কম্পিউটার প্রোগ্রাম এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে তারা মানুষের বুদ্ধিমত্তার অনুকরণ করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে- ডেটা থেকে প্যাটার্ন শনাক্ত করা এবং অভিজ্ঞতা থেকে শেখা, লজিক ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান করা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া, জটিল পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করা এবং ছবি, ভিডিও বা শব্দ থেকে তথ্য গ্রহণ ও ব্যাখ্যা প্রদান ইত্যাদি। এআই-এর মূল চালিকাশক্তি মেশিন লার্নিং (ML), ডিপ লার্নিং (DL) এবং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP)।
কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা (এআই)-এর বিবর্তন
১৯৫১ সালে যখন ক্রিস্টোফার স্ট্রেচি তার চেকার্স প্রোগ্রাম দিয়ে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেরান্টি মার্ক ১ কম্পিউটারে একটি পুরো খেলা সম্পন্ন করেন, তখন থেকে এআই অনেকদূর এগিয়েছে। মেশিন লার্নিং এবং ডিপ লার্নিংয়ের উন্নয়নে আইবিএমের ডিপ ব্লু ১৯৯৭ সালে দাবা গ্র্যান্ডমাস্টার গ্যারি কাসপারভকে পরাজিত করে এবং কোম্পানিটির আইবিএম ওয়াটসন ২০১১ সালে জেপার্ডি (Jeopardy!)-তে জয়লাভ করে। তারপর থেকে জেনারেটিভ এআই এআই-এর বিবর্তনের সর্বশেষ অধ্যায়ের নেতৃত্ব দিয়েছে, যেখানে ওপেনএআই (OpenAI) ২০১৮ সালে তার প্রথম জিপিটি (GPT) মডেলগুলো প্রকাশ করে। এর ফলস্বরূপ ওপেনএআই তার জিপিটি-৪ও (GPT-4o) মডেল এবং চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) তৈরি করেছে, যা এআই জেনারেটরগুলোর দ্রুত প্রসারের দিকে পরিচালিত করেছে যা প্রাসঙ্গিক টেক্সট, অডিও, ছবি এবং অন্যান্য ধরনের বিষয়বস্তু তৈরি করতে প্রশ্ন করতে পারে। অন্যান্য কোম্পানিগুলোও তাদের নিজস্ব প্রতিযোগী মডেল নিয়ে এগিয়ে এসেছে, তন্মধ্যে গুগলের জেমিনি (Gemini), অ্যানথ্রোপিকের ক্লদ (Claude) এবং ডিপসিকের আর১ (R1) এবং ভি৩ (V3) মডেল, যা ২০২৫ সালের প্রথম দিকে শিরোনাম হয়েছিল। পরে এসব মডেল এবং অ্যালগরিদম-ভিত্তিক মেশিন লার্নিংয়ের ওপর নির্ভর করে এবং ক্রমবর্ধমানভাবে আধুনিক ফিচার, তর্ক-যুক্তি এবং অন্যান্য সাধারণীকরণে মনোযোগ দেয়।
১০ বছর আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ভবিষ্যৎ কেমন ছিল?
দশকের পর দশক ধরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ভীতি এবং উত্তেজনা উভয়ই তৈরি করেছে। একসময় মানুষ ভাবতেও পারেনি- তাদের নিজেদের পরিবর্তে মেশিনকে কাজে লাগাতে পারবে। এ ধারণা ছিল না যে, বুদ্ধিমান যন্ত্রগুলো মানবসদৃশ বস্তু হতে পারে, তবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মাধ্যমে সে কাল্পনিক দৃশ্য বাস্তবে রূপ নিয়েছে। মনুষ্য কার্যকলাপ যেমন দাবা (এইচএসইউ, ২০০২), গো (সিলভার এট আল, ২০১৬) এবং অনুবাদ (উ এট আল, ২০১৬)-এ মানুষের সক্ষমতা ছাড়িয়ে যাওয়া সাফল্যের শিরোনাম তৈরি করলেও, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অন্তত ১৯৮০-এর দশক থেকে প্রযুক্তিবিশ্বে অল্প পরিচিত শব্দ ছিল। তারপর সার্কিট বোর্ড পরিদর্শন এবং ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি শনাক্তকরণের জন্য ‘এক্সপার্ট’-এর সিস্টেমগুলো মূলধারার প্রযুক্তিতে পরিণত হয়। একইভাবে, জেনেটিক অ্যালগরিদমগুলোর মতো এমএল পদ্ধতি দীর্ঘকাল কঠিন কম্পিউটিং সমস্যাগুলোর জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং নিউরাল নেটওয়ার্কগুলো কেবল মানুষের শেখার মডেল বা বোঝার জন্য নয়, মৌলিক শিল্প নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যবেক্ষণের জন্যও ব্যবহৃত হয়েছে। সম্ভবত- বায়েসিয়ান (Bayesian) পদ্ধতি ১৯৯০-এর দশকে মেশিন লার্নিংয়ে বিপ্লব ঘটিয়েছিল, যা আজকে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এআই প্রযুক্তিগুলোর কাছাকাছি কিছু উদাহরণস্বরূপ বিশাল ডেটা সেন্টারের মাধ্যমে অনুসন্ধান করার পথ প্রশস্ত করেছিল; যা ওয়েব ব্যবহারকারীদের কয়েকটা বাক্য টাইপ করে বিলিয়ন বিলিয়ন ওয়েব পৃষ্ঠার মধ্য থেকে তারা যে বিষয়বস্তু খুঁজছেন তা খুঁজে পেতে সক্ষম করে তুলেছিল।
পরিবহনে সম্ভাবনা
আপনি যদি মনে করেন স্বচালিত যানবাহন এক অনন্য ভবিষ্যৎ, তবে ধারণাটি সঠিক। টেসলা, ওয়েমোর স্মার্ট গাড়ি ইতোমধ্যে বাজারে প্রবেশ করেছে। ২০১৫ সালে মাত্র ৮ শতাংশ অটোমোবাইল এবং অন্যান্য বাহনে এআই-চালিত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল, যা আজকের বিশ্বে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে এই শতাংশ ১০৯ ভাগ বৃদ্ধি পেতে পারে। এই যানবাহনগুলোয় ভবিষ্যদ্বাণীমূলক সিস্টেম রয়েছে- যা চালকদের সম্ভাব্য অতিরিক্ত যন্ত্রাংশের ব্যর্থতা, রুট এবং ড্রাইভিং নির্দেশাবলি, জরুরি অবস্থা এবং দুর্যোগ প্রতিরোধমূলক পদ্ধতি এবং আরও অনেক কিছু সম্পর্কে নির্ভরযোগ্যভাবে অবহিত করে। তা ছাড়া ট্র্যাফিক প্যাটার্ন বিশ্লেষণ, পণ্যের ডেলিভারির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিজ্ঞান...
স্বাস্থ্য খাতের তথ্য ও জ্ঞান পাওয়ার ক্ষেত্রে দারুণ পরিবেশ তৈরি করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। এ খাতে বৈশ্বিকভাবে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে এআই। যার অন্যতম উদাহরণ হলো- এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই এবং প্যাথলজি রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস বা অন্যান্য জটিল রোগ দ্রুত ও নির্ভুলভাবে শনাক্ত করা। নতুন ওষুধ তৈরির প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করা এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য সঠিক রোগীদের নির্বাচন করা। এমনকি রোগীর ডেটা বিশ্লেষণ করে তার জন্য সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি সুপারিশ করা। পাশাপাশি রোগীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট শিডিউলিং, নার্সিং স্টাফ বরাদ্দ এবং ইনভেন্টরি ব্যবস্থাপনার উন্নতি। অর্থাৎ আপনি যদি ডাক্তারের কাছে না-ও যান, এআই একটি ফিটনেস ব্যান্ড বা একজন ব্যক্তির মেডিকেল হিস্টরি থেকে ডেটা পড়ে, প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে এবং উপযুক্ত ওষুধের পরামর্শ দিয়ে রোগের নির্ণয় করতে পারে, যা সেল ফোনের মাধ্যমে সহজেই অর্ডার করা যায়। ফলে বলাই যায়, ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যসেবা শিল্পে এআই ব্যবহারকারীরা লাভবান হবে।
অর্থনীতি ও ফিন্যান্স
যে কোনো দেশের অর্থনীতি ও আর্থিক পরিস্থিতি সরাসরি তার প্রবৃদ্ধি পরিমাপের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেহেতু এআই-এর কার্যত প্রতিটি শিল্পে সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে, তাই এটি মানুষের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। আজকাল ইক্যুইটি তহবিল ব্যবস্থাপনায় ‘এআই অ্যালগরিদম’ ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় জালিয়াতি শনাক্ত, শেয়ারবাজারে স্বয়ংক্রিয় লেনদেন, ব্যক্তির আর্থিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করে ক্রেডিট যোগ্যতা নির্ধারণ, এমনকি চ্যাটবট ব্যবহার করে গ্রাহকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এবং সহায়তা প্রদানেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, ভবিষ্যতের এআই-চালিত রোবো-উপদেষ্টা আর্থিক খাতে অগ্রনি ভূমিকা রাখবে।
সাইবার সিকিউরিটি
এআই-সহায়তায় প্রাপ্ত সামরিক প্রযুক্তিগুলো স্বায়ত্তশাসিত (অটোমেটিক) অস্ত্র তৈরি করেছে। যার জন্য এখন আর মানুষের প্রয়োজন হয় না। এআই অস্ত্রের ব্যবহার নিশ্চিত করছে। ফলে একটি জাতির নিরাপত্তা উন্নত করার সবচেয়ে নিরাপদ উপায় তৈরি হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে আমরা রোবট সমর বাহিনী দেখতে পারি যা একজন সৈনিক/কমান্ডোর মতোই বুদ্ধিমান এবং বিভিন্ন কাজ করতে সক্ষম। এআই-সহায়তায় মিশনের কার্যকারিতা উন্নত করবে এবং নিরাপদ কার্যকারিতাও নিশ্চিত করবে। তা ছাড়া প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সাইবার সিকিউরিটির নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ আসছে। সাইবার নিরাপত্তা উন্নতকরণে এআই এবং মেশিন লার্নিংয়ের ব্যবহার বাড়বে। সাইবার হামলার প্যাটার্ন শনাক্ত এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
যে কোনো দেশের শিক্ষার স্তর সে দেশের অগ্রগতি নির্ধারণ করে। আজকের বিশ্বে উন্নত রাষ্ট্রগুলো তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এআই-এর কোর্স অন্তর্ভুক্ত করেছে। তবে ভবিষ্যতে এআই শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনবে। আজকাল উৎপাদন শিল্পে যেমন দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন নেই, কারণ রোবট এবং প্রযুক্তি তাদের বেশির ভাগই প্রতিস্থাপন করেছে। তেমনি শিক্ষাব্যবস্থা খুব কার্যকর হওয়ার এবং একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব এবং ক্ষমতা অনুযায়ী তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি বিকশিত করবে। উদাহরণস্বরূপ- শিক্ষার্থীদের শেখার ধরন ও দুর্বলতা বুঝে কাস্টমাইজড কোর্সওয়ার্ক তৈরি, এআই-চালিত ভার্চুয়াল টিউটর এবং শিক্ষার্থীদের লেখা বা পরীক্ষার উত্তর স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্যায়নে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার শিক্ষাব্যবস্থার মান বৃদ্ধি করছে।
আছে নানাবিধ শঙ্কাও...
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্বর্ণযুগে পা রেখেছে বিশ্ব। এরই মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহারের নমুনা দেখে চোখ কপালে উঠেছে সবার। হুবহু যে কোনো মানুষের কণ্ঠস্বর নকল করছে ভয়েস ক্লোনিং নামের প্রযুক্তি। এর জন্য কাউকে মাত্র কয়েক মিনিট তার কণ্ঠের রেকর্ডিং করে দিতে হয়। সঙ্গে সঙ্গে সফটওয়্যার জেনে যায় তার কণ্ঠের আওয়াজ, তার বাচনভঙ্গি- কীভাবে ওই ব্যক্তি কথা বলেন। তা ছাড়া শুধু কণ্ঠস্বর নয়- গোটা মানুষের ভিডিও নকল করা যায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে। ডিপফেক নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক ও সমালোচনা দেখা গেছে। এর মাধ্যমে নকল ভিডিও তৈরি হয় অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আপনার মুখের সঙ্গে অন্য কোনো ব্যক্তির শরীর জুড়ে দিয়ে ভিডিও বানানো হয়। এ প্রযুক্তি দিয়ে হুবহু নকল ভিডিও বানানো সম্ভব হচ্ছে। মেশিন লার্নিং প্রয়োগের মাধ্যমে দিন দিন নিখুঁতভাবে নকল ভিডিও বানানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে অভিনেত্রী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সেলেব্রিটি অনেকেই বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। অনেকের নগ্ন ছবি, ভিডিও, অডিওবার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন সাইবার অপরাধীরা। প্রথম দেখায় বেশির ভাগ মানুষই বুঝতে পারেননি এসব সফটওয়্যার ব্যবহার করে তৈরি। আরও ভয়াবহ ব্যাপার হলো- কিবোর্ডের টাইপের শব্দ শুনে পাসওয়ার্ড চুরি করছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। স্মার্টফোনে কাজটি করছে মাইক্রোফোন ব্যবহার করে। এআই নিয়ে কাজ করেন এমন নেতৃস্থানীয় প্রযুক্তিবিদরা মনে করেন, মানুষের অস্তিত্বের জন্যও হুমকি হতে পারে এআই। তাদের ভাষ্য- মহামারি এবং পারমাণবিক যুদ্ধের মতো ঝুঁকি বলে বিবেচনা করা উচিত।
কৃষি ও উৎপাদন শিল্প
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। পাশাপাশি উৎপাদন শিল্প তথা- শিল্প কারখানাগুলোয় এআইয়ের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে শুধু খাদ্যে স্বনির্ভরতা নয়, একটি দেশের শক্তিশালী রপ্তানিমুখী অর্থনীতিতে রূপান্তর করা সম্ভব। বিশ্ব অর্থনীতি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষি খাতের ভূমিকা অতিপ্রাচীন। তবে আজকের উন্নত দেশগুলো কৃষি খাতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি করেছে আগের চেয়ে বহুগুণে। যার ফলাফলও বেশ চমকপ্রদ। আজকাল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে স্মার্ট ফার্মিং অর্থাৎ মাটির অবস্থা বিশ্লেষণ, ফসলের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এবং স্বয়ংক্রিয় সেচ ব্যবস্থা পরিচালনা ক্যামেরা ও এআই ব্যবহার করে ফসলের রোগ বা পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত এমনকি রোবট ব্যবহার করেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফসল কাটার কাজগুলো সেরে নেওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া শিল্প কারখানাগুলোয় এআই-এর ব্যবহারের ফলে উৎপাদন শিল্পে পণ্যের মান বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা - আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আশীর্বাদ হতে পারে, যদি-
► আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পরিবহন এবং যোগাযোগের মতো মৌলিক ক্ষেত্রগুলোতে ব্যাপক উন্নতি আনতে পারে, তবে তা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়াবে। রোগনির্ণয় ও চিকিৎসায় নির্ভুলতা বাড়বে, ব্যক্তিগত শিক্ষা প্রতিটি শিক্ষার্থীর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সাহায্য করবে এবং স্বচালিত পরিবহন ব্যবস্থা দুর্ঘটনা ও যানজট কমিয়ে দেবে।
► শিল্প ও অর্থনীতিতে এআই অভূতপূর্ব উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়াগুলো দক্ষতা বাড়াবে, খরচ কমাবে এবং মানবসম্পদকে আরও সৃজনশীল ও জটিল কাজে নিযুক্ত করার সুযোগ দেবে।
► জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য এবং নতুন রোগের মতো বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে এআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশাল ডেটা সেট বিশ্লেষণ করে এআই এমন সব প্যাটার্ন খুঁজে বের করতে পারে যা মানুষের পক্ষে অসম্ভব।
► যদিও কিছু চাকরি হারানোর আশঙ্কা আছে, এআই একই সঙ্গে নতুন শিল্প এবং নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করবে। এআই ডেভেলপার, এআই এথিসিস্ট, ডেটা সায়েন্টিস্ট ইত্যাদি। মানুষ শুধু এআই সিস্টেম ডিজাইন, রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করবে।
► এআই মানুষের সক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, মানব-যন্ত্র সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা এমন সব কাজ করতে পারব যা আগে অকল্পনীয় ছিল। যেমন- সার্জনরা এআই-নির্ভর রোবটের সাহায্যে আরও নির্ভুলভাবে অপারেশন করতে পারবেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অভিশাপ হতে পারে, যদি-
► যদি এআই দ্রুতগতিতে মানুষের কাজ কেড়ে নেয় এবং নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি না হয়, তাহলে বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য দেখা দিতে পারে। যারা এআই প্রযুক্তিতে দক্ষ নয়, তারা পিছিয়ে পড়বেন।
► কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা এআই-এর নৈতিক ব্যবহার নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। যেমন- এআই বিপুল পরিমাণ ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে, যা গোপনীয়তার ঝুঁকি তৈরি করে।
► যদি এআই সিস্টেমকে পক্ষপাতদুষ্ট ডেটা দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তাহলে এটি সমাজে বিদ্যমান বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, যেমন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বা বিচার ব্যবস্থায়।
► কিছু জটিল এআই মডেল (যেমন ডিপ লার্নিং) কীভাবে সিদ্ধান্ত নেয় তা বোঝা কঠিন, যাকে ‘ব্ল্যাক বক্স’ সমস্যা বলা হয়। এটি তাদের সিদ্ধান্তগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।
► এআই-চালিত অস্ত্র ব্যবস্থার উন্নয়ন যুদ্ধের প্রকৃতি পরিবর্তন করতে পারে এবং মানব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, যা বিপর্যয় তৈরি করতে পারে।