ড্রোনটি একবার চার্জ করলে ৩০ মিনিট উড়তে পারে। এটি তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। আরও ৪০-৫০ হাজার টাকা যোগ করলে ২০-২৫ লিটার তরল পদার্থ নিয়ে উড়তে এবং স্প্রে করতে পারবে ড্রোনটি
কৃষকের কথা চিন্তা করে সবুজ সরদার তৈরি করেছেন ‘ড্রোন’। এতে অল্প সময়ে কৃষক নিরাপদে ফসলের খেতে সার, বীজ ছিটানো ও কীটনাশক স্প্রে করতে পারবেন। এতে খরচও কমবে। শুধু কৃষিকাজ নয়, এই ড্রোনের মাধ্যমে আম-লিচু বাগানসহ যে কোনো ফলমূলের বাগান ও সবজি খেতে স্প্রে করা যাবে। প্রয়োজনে পুকুর বা জলাশয়ে মাছের খাবারও ছিটানো যাবে।
কৃষিকাজের উন্নয়নে ও কৃষকের উপকারের জন্যই এই ড্রোন। এর ব্যবহার বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউপির পলি শিবনগর গ্রামের তরুণ সবুজ সরদার। ২০২২ সালে কৃষিকাজে ব্যবহার উপযোগী এই ড্রোন তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন তিনি। তখন নতুন উদ্ভাবন দেখতে তার বাড়িতে অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন। রিমোট ও জিপিএসের মাধ্যমে দূর থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় ড্রোনটি। তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘কিষানি ড্রোন’। আশপাশের এলাকার অনেকে এই ড্রোন দিয়ে ফসলের খেতে স্প্রে করছেন। ড্রোনটি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। তবে ড্রোনের আকার ও ধারণক্ষমতার ভিত্তিতে এর দাম কম-বেশি হতে পারে। সবুজ সরদারের বাবা একরামুল সরদার কৃষিকাজের পাশাপাশি পেশায় একজন ভ্যানচালক। সবুজ সরদার ফুলবাড়ী কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পাস করেন। পরে দিনাজপুর উত্তরণ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু অর্থের অভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। গ্রামের মোড়ে একটি দোকানে মোবাইল মেকানিকের কাজ শুরু করেন। এরপরেই উদ্ভাবনের নেশা চেপে বসে। মাত্র ৪৫ দিনের চেষ্টায় একটি চালকবিহীন ছোট বিমান তৈরি করে হইচই ফেলে দেন। তিনি এটি আকাশে ওড়াতে সক্ষম হন। সে সময় ইরি-বোরো মৌসুমে খেতে কীটনাশক ছিটাতে গিয়ে এক কৃষিশ্রমিক অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এ অবস্থা দেখে সবুজ সরদারের ভাবনায় আসে কীভাবে কৃষিজমিতে ঝুঁকিবিহীন কীটনাশক স্প্রে করা যায়।
সেই চিন্তা থেকে শুরু হয় তার দ্বিতীয় প্রজেক্টের কাজ। তিন মাসের চেষ্টায় সফল হন তিনি, তৈরি করেন ড্রোন। এটাতে সংযোগ করা হয়েছে জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম)। এতে যে কোনো জায়গায় বসে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সবুজ সরদার এইচএসসি পাস করে এখন ফুলবাড়ীতে স্নাতক শ্রেণিতে পড়ছেন। এখন চালকহীন এই ড্রোন উন্নয়নে ব্যস্ত তিনি। স্থানীয়রা জানান, ‘সবুজ পাঠকপাড়া বাজারে মোবাইল মেকানিকের কাজ করেন। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ছেলেটির মেধা আছে। তার ড্রোন দিয়ে অনেকে ধানখেতে সার-কীটনাশক স্প্রে করেছেন। সবুজের এই আবিষ্কার যদি সরকারিভাবে কাজে লাগানো যেত, তাহলে দেশের কৃষকের উপকার হতো।’ সবুজের বাবা একরামুল সরদার জানান, ‘সরকারি সহায়তা পেলে ছেলেটা আরও ভালো কিছু করতে পারত।’ নিজের উদ্ভাবন সম্পর্কে সবুজ সরদার বলেন, ‘আমার প্রথম তৈরি ড্রোনটির ধারণক্ষমতা দুই লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন। একবার চার্জ করলে ৩০ মিনিট উড়তে পারে। এটি তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। আরও ৪০-৫০ হাজার টাকা যোগ করলে ২০-২৫ লিটার তরল পদার্থ নিয়ে উড়তে এবং স্প্রে করতে পারবে ড্রোনটি। চলবেও কয়েক ঘণ্টা।’ এ ড্রোন দিয়ে ঘণ্টায় ১০ একর জমিতে কীটনাশক স্প্রে করা সম্ভব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ড্রোন তৈরির পর বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশকে একটি ড্রোন তৈরি করে দিয়েছি।’ তারা এখন সেই ড্রোন দিয়ে রাস্তার যানজট নিরসনের কাজ করছেন। এরপর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দুটি ড্রোন তৈরি করে দিয়েছি যেটা ১৬ লিটার ক্যাপাসিটি সম্পন্ন।’