ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতি আবারও অনিশ্চয়তার মুখে বলে মনে করেন জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক ও সাংবাদিক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই পারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে।
জিল্লুর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সময়সূচি ঘোষণা করলেও রাজনৈতিক মাঠে বিরোধ ও শর্তের পাহাড় তৈরি হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—‘জুলাই সনদ’ আইনি ভিত্তি পেয়ে বাস্তবায়ন না হলে তারা নির্বাচনে যাবে না।
এদিকে গত জুনে লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক যৌথ ঘোষণায় ফেব্রুয়ারির ভোটে অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু জামায়াত ও এনসিপির অভিযোগ, ওই সমঝোতা ছিল একতরফা। তাদের দাবি, আওয়ামী লীগের পতনের পর যে সংস্কারের রূপরেখা তৈরি হয়েছিল, সেটি ভোটের আগেই কার্যকর করতে হবে।
জিল্লুর রহমান বলেন, বিএনপি চায় সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সংস্কার হবে নতুন সংসদে। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপির অভিযোগ, প্রশাসন লন্ডন বৈঠকের পর থেকেই বিএনপির প্রতি নরম আচরণ করছে, ফলে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নষ্ট হচ্ছে। এনসিপি, জামায়াতের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনসহ কিছু ইসলামপন্থী দল প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতিতে ভোটের দাবি তুলেছে, যা বিএনপির অবস্থানের বিপরীত। দলটি এসব দাবিকে নির্বাচনের সময় পিছিয়ে দেওয়ার কৌশল হিসেবে দেখছে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির ধারণা শেষ মুহূর্তে সবাই ভোটে অংশগ্রহণ করবে। তবে কোনো কারণে তারা অংশ না নিলে নির্বাচনের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ গ্রহণযোগ্যতা সংকটে পড়তে পারে। ইতিহাসও সতর্ক করছে—১৯৮৮ সালের নির্বাচন বা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট আজও প্রশ্নবিদ্ধ।’
তিনি আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় ৮২টি সংস্কারে সমঝোতা হলেও বাস্তবায়নের সময় ও প্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ থেকে গেছে। বিশেষজ্ঞদের কেউ বলছেন অধ্যাদেশের পথ, কেউ গণভোট বা গণপরিষদের প্রস্তাব দিচ্ছেন। তবে সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা ও রাজনৈতিক ঝুঁকি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চাহিদা একটি শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা না হয় তাহলে ভোটের আগে তৈরি হওয়া অবিশ্বাসের আবরণ ভেতর থেকে গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ