মায়াজমা তত্ত্ব অনুসারে, দুর্গন্ধযুক্ত বায়ু রোগের কারণ। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ডাক্তার ও বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে, কলেরা, প্লেগ, ম্যালেরিয়ার মতো রোগগুলো মায়াজমা বা পচা জৈব পদার্থ থেকে নির্গত বিষাক্ত, দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস থেকে ছড়ায়। প্রাচীন গ্রিস থেকে ১৯ শতক পর্যন্ত এই তত্ত্বের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। এই ধারণায় ভিত্তি করে শহর পরিষ্কার, নিকাশী ব্যবস্থাা ও বর্জ্য অপসারণে উদ্যোগ নেওয়া হয়- যা পরোক্ষভাবে রোগ হ্রাসে সহায়ক হয়। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। হাস্যকরভাবে এই স্যানিটেশন প্রচেষ্টাগুলো রোগ কমাতে সাহায্য করত বটে, তবে তা বিষাক্ত বাতাস দূর করার জন্য নয়; বরং রোগের কারণ যে প্যাথোজেন এবং জলবাহিত দূষণ, তাদের প্রজননক্ষেত্রগুলো নির্মূল করার কারণে। মায়াজমার মূল ধারণাটি ছিল মৌলিকভাবে ভুল। ১৮০০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে লুই পা¯‘র এবং রবার্ট কক-এর মতো বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেন যে, বেশির ভাগ সংক্রামক রোগের কারণ হলো অণুজীব অর্থাৎ রোগ ছড়ায় মূলত ‘ব্যাকটেরিয়া’ ও ‘ভাইরাস’-এর মাধ্যমে। ফলে ‘জীবাণু তত্ত্ব’-এর আবির্ভাব হয় এবং আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটে। ওষুধ, জনস্বাস্থ্যা ও এপিডেমিওলজিতে যুগান্তরকারী সূচনা হয়। অদৃশ্য ভয় থেকে বিজ্ঞানীরা সুনির্দিষ্ট রোগ-জীবাণুর দিকে মনোযোগ দেন। ফলে স্বাস্থ্যা-বিধি, জীবাণুমুক্তকরণ ও টিকাকরণের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়। এটি প্রমাণ করে যে, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির জন্য প্রচলিত বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করতে হয়।