প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো ভাওয়ালের ঐতিহাসিক রাজবাড়ির ‘রাজদিঘি’র বর্তমানে করুণ অবস্থা। ঐতিহ্যবাহী দিঘিটি নিয়ে গাজীপুরবাসী একসময় গর্ব করলেও বর্তমানে এটি অযত্ন, অবহেলায় অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। সঠিক তদারকি করা হলে রাজদিঘিটি হতে পারে গাজীপুরের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। জেলা প্রশাসন বলছে, দিঘির চারপাশ সংস্কার করে একে দর্শনীয় স্থান তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। ভাওয়াল রাজদিঘি রাজা কালীনারায়ণ রায় চৌধুরীর আমলে খনন কাজ সমাপ্ত করা হয়েছিল। রাজবাড়ির পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত বিশাল এই দিঘিতেই স্নান সমাপন করতেন রাজবংশীয় লোকেরা। রানির জন্যও দিঘির উত্তর পার্শ্বে নির্দিষ্ট স্থানে নির্মিত হয়েছিল একটি সুন্দর ঘাট ও গোসলখানা। তবে দিঘির অবস্থা করুণ হলেও ঘাট দুটো কালের সাক্ষী হয়ে এখনো যথাস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। গাজীপুর জেলার প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভাওয়াল রাজবাড়ি। রাজবাড়ির মূল ফটক ধরে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে সুন্দর একটি ভবন, যা বর্তমানে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। এ রাজবাড়ির পশ্চিম পাশেই রয়েছে বিশাল একটি দিঘি, যাকে ‘রাজদিঘি’ বলা হয়। ৫ দশমিক ৮৬ একর জমির ওপর এই দিঘিটি ঐতিহাসিক ভাওয়াল রাজবাড়ির অংশ এবং এটি গাজীপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান। দিঘিটি সরেজমিন গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকে বিভিন্ন স্থানের ময়লা-আবর্জনা দিঘিটির কিনারায় ফেলে যায়। দিঘির চারপাশে নানা ধরনের আগাছা জন্মেছে। প্রায়ই কচুরিপানায়ও ঢেকে যায়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে তা পরিষ্কারও করা হয়। দূষণের কারণে দিঘির পানি কালো বর্ণ ধারণ করেছে। অথচ একসময় দিঘির স্বচ্ছ পানিতে স্থানীয়রা গোসল করত। বিশাল এই দিঘিটি সংস্কার করে পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষ এবং চারপাশে বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষরোপণ করে রাজবাড়ি দেখার জন্য আগত দর্শকদের দৃষ্টি কাড়বে। স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, আগে আমরা এই রাজদিঘিতে গোসল করতাম। অনেকে এই দিঘির স্বচ্ছ পানি বিভিন্ন কাজে ব্যবহারও করত। যে যার মতো দিঘির পানিতে ময়লা ফেলে চলে যান। তিনি আরও বলেন, স্থানীয়দের সচেতনতায় দিঘির পাশে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছিল। তবুও মানুষ ময়লা-আবর্জনা ফেলে।
বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন বলেন, গাজীপুরের রাজদিঘি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি জলাধার, এটি ভাওয়াল রাজার আমলে ঢোলসমুদ্র নামে পরিচিত। এই ঐতিহাসিক জলাধারকে রক্ষা করা, সংরক্ষণ করা খুবই জরুরি। এলাকার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষা বিবেচনা করে রাজদিঘিটি সংরক্ষণ করা খুবই জরুরি। গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ কায়সার খসরু বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বছর দুবার দিঘিটির কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। রাজদিঘিটির চারপাশের পাড় সংস্কার, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ঘাট সংস্কার, লাইট স্থাপনসহ বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজের জন্য ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।