পল্লীকবি জসীমউদ্দীন বানিয়াচং পরিদর্শনকালে নয়নাভিরাম সাগরদিঘির প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ‘রানি কমলাবতীর দীঘি’ নামে একটি কবিতা লিখেছিলেন। কবিতাটি তার সূচয়নী কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে...
দ্বাদশ শতাব্দীতে খনন করা হয় সাগরদিঘি। হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা সদরে অবস্থিত এটি। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ভিড় করেন এই দিঘি দেখতে। দৃষ্টিনন্দন এই দিঘিকে অনেকে কমলা রানির দিঘি বলেও চেনেন। স্থানীয়রা বলছেন, এই দিঘিটি ঘিরে যদি প্রশাসন উদ্যোগ নেয় তাহলে এটি হতে পারে সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট। সরেজমিনে দেখা যায়, দিঘিটির চারপাশ সবুজ গাছগাছালিতে ছেয়ে আছে। দিঘিটি দেখতে লম্বাটে। যে কারণে এটিকে সাগরদিঘি বলা হয়। বানিয়াচং উপজেলা সদরের মাঝামাঝিতে প্রায় ৬৬ একর জায়গার ওপর রয়েছে এই দিঘি। আয়তনের দিক থেকে দিঘিটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাধার বলে জানা যায়। দিঘিটির স্বচ্ছ জল আর হিমেল বাতাস যেন বিকালের অনন্য অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেই দিঘির পাড়ে ভিড় করেন নানা বয়সি মানুষ। তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ করা যায়। অনেকেই দিঘির পাড়ে বসে আড্ডা দেন। কেউ কেউ ব্যস্ত ছবি তুলতে। দিঘিটির পশ্চিম পাড়ে এলআর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও একটি সবুজ মাঠ রয়েছে। স্কুলের ঠিক দক্ষিণেই ‘লাউড় রাজ্যে’র সময়কার স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। রয়েছে পাথরের তৈরি বিশাল দাড়া-গুটি। লোকমুখে শোনা যায়, দ্বাদশ শতাব্দীতে সামন্ত রাজা পদ্মনাভ প্রজাদের জলকষ্ট নিবারণের জন্য বানিয়াচংয়ে এ বিশাল দিঘি খনন করেন। দিঘি খননের পর পানি না ওঠায় স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে রাজা পদ্মনাভের স্ত্রী রানি কমলাবতী এ দিঘিতে নিজেকে বিসর্জন দেন বলে একটি উপাখ্যান প্রচলিত আছে। এজন্য এ দিঘিকে কমলা রানির দিঘিও বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও এ দিঘির কাহিনি নিয়ে বাংলা ছায়াছবিসহ রেডিও মঞ্চনাটক রচিত হয়েছে।
পল্লীকবি জসীমউদ্দীন বানিয়াচং পরিদর্শনকালে নয়নাভিরাম সাগরদিঘির প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ‘রানি কমলাবতীর দীঘি’ নামে একটি কবিতা লিখেছিলেন। কবিতাটি তার সূচয়নী কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ফরহাদ মাম্মদ বলেন, বানিয়াচংয়ের ইতিহাস বলতে গেলে সাগরদিঘির কথা আসবেই। দিঘিটি রয়েছে এ অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্যের পাতায়। ফলে দিঘির সৌন্দর্য রক্ষা এবং এটিকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার দাবি সবার। স্থানীয়দের অনেকেই জানান, সাগরদিঘির তিন পাড়ের তীর বেশ খানিকটা দখল হয়ে গেছে। এ ছাড়াও লাউড় রাজ্যের সময়কার স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ, মোগল আমলের স্থাপত্যকীর্তির মসজিদ, পাথরের দাড়া-গুটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এসব সংরক্ষণে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। এ বিষয়ে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম সাথী বলেন, ‘আমি যোগদানের আগে দিঘি দেখতে আসা পর্যটকদের জন্য বসার ব্যবস্থাসহ নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয়দের বাধার কারণে তা আর হয়নি। তার পরও দিঘিটির সৌন্দর্যরক্ষায় কিছু জায়গায় গাইড ওয়াল নির্মাণ করে দিয়েছি। যাতে দিঘির পাড়ের মাটি ভেঙে না পড়ে। দিঘিটি বিশাল, তাই এত বাজেটও নেই যে, পুরো দিঘির গাইড ওয়াল করা যাবে। তার পরও এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’