গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় রয়েছে ৩২ বিঘা জমির ওপর ‘ওয়াদ্দারদিঘি’। এটি হাজার বছরের আগে খনন করা হয়েছিল বলে জানা যায়। দিঘি ঘিরে ভ্রমণপিপাসু মানুষের বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। কবে, কখন, কেন ও কীভাবে এ দীঘিটি খনন করা হয়েছে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। গবেষক, ইতিহাসবিদ ও দিঘি সম্পর্কে বিভিন্ন বই থেকে জানা যায়, এটির বয়স ১ হাজার ২০০ বছরের বেশি। আবার কিছু বইতে উল্লেখ করা হয়েছে, দিঘিটির বয়স ৯২০ থেকে ৯৫০ বছরের কাছাকাছি। মধ্যযুগ শুরুর পর ভারতের আসাম থেকে আদিত্য পাল নামে এক রাজা এসেছিলেন ভাওয়াল অঞ্চলে। অষ্টম শতাব্দীর গোড়ার দিকে এসেই সামন্ত রাজাদের কাছ থেকে পুরো অঞ্চলের কর্তৃত্ব কেড়ে নেন তিনি। শাসন করতে থাকেন বিশাল এ অঞ্চল। তখন এলাকাটি ‘চেদি রাজ্য’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এ রাজ্যের রাজধানী ছিল কাপাসিয়ার কলমেশ্বর এলাকায়। অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় এখানে শাসন করেন আদিত্য পাল। শ্রীপুর উপজেলার শৈলাট এলাকায় তিনি একটি বিশাল উদ্যান নগরী গড়ে তোলেন। আদিত্য পালের শাসনামলে চেদি রাজ্যের রাজধানী কাপাসিয়ার কলমেশ্বর থেকে পশ্চিমে শ্রীপুরের শৈলাট এলাকায় গড়ে তোলা উদ্যান নগরীতে যাওয়ার জন্য গোসিঙ্গা হয়ে একটি রাস্তা তৈরি করেন তিনি। রাজ্যের সেনাবাহিনীর পানির চাহিদা মেটাতে এ রাস্তার পাশে ৩২ বিঘা জমির ওপর দিঘিটি খনন করেন। বিভিন্ন ইতিহাসগ্রন্থ পর্যালোচনা ও গবেষণার পর ধারণা করা হয়, দিঘিটি অষ্টম শতকের পরপরই খনন করা হয়েছিল। ১৩৪২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ইসলাম প্রচারে এসে আদিত্য পালের দিঘি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ফকির-দরবেশরা। এ ছাড়াও ভারত থেকে ইসলাম প্রচারে আসেন পাহলোয়ান শাহ্ গাজী। তিনি দিল্লির বাদশাহর জায়গিরদার হন। তার অনুসারী ও ধর্মপ্রচারকরা আদিত্য পালের দিঘি ব্যবহার করেছেন বলে জানা যায়। ব্রিটিশ শাসনামলে দিঘিটির পত্তন দেওয়া (নির্দিষ্ট মেয়াদ ও খাজনার শর্তে গৃহীত ভূমিস্বত্ব) হয়। ব্রিটিশ শাসকের কাছ থেকে দিঘির পত্তন নেন এক মুসলিম ব্যক্তি। পরে ওই ব্যক্তির নামানুসারে এটি হয় ‘ওয়াদ্দার দিঘি’। ১৯৬৩ সালে শ্রীপুরের ঐতিহ্যবাহী মণ্ডল পরিবারের প্রয়াত কালো মণ্ডল সর্বপ্রথম এই দিঘির সংস্কার করেন। জানা যায়, ১৯৯০ সালে পুকুরের পশ্চিম পাশে নির্মাণ করা হয় গুচ্ছগ্রাম। আর দক্ষিণ পাশে রয়েছে হিন্দুদের তৈরি বিশাল আকৃতির মঠ সমাধিস্থল। এখানে প্রভাবশালী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের সমাহিত করা হতো বলে ধারণা করা হয়। পূর্বপাশে কেন্দ্রীয় পৌর ঈদগাহ মাঠ আর উত্তরে রয়েছে মাদরাসা। ওয়াদ্দারদিঘি কেন্দ্রিক গড়ে ওঠে দর্শনার্থীদের মিলনমেলা। বর্তমানে একটি সমবায় সমিতির মাধ্যমে এখানে মাছ চাষ হচ্ছে। পুকুরে রয়েছে দেশি-বিদেশি প্রজাতির অনেক মাছ। প্রতিদিনই বিকালে বিনোদনপ্রেমী সাধারণ মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। দিঘির পানি এখনো অনেক স্বচ্ছ। দিঘির জলে খেলা করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। পাকা ঘাটে বসে গোসল ও কাপড় ধোয়াসহ দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কাজ সারেন স্থানীয়রা। দিঘির পানি ব্যবহার করে অজু সারেন মুসল্লিরা। দিঘিটির পানি কখনো শুকায়নি বলে জানান স্থানীয়রা। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শ্রীপুর পৌরসভার প্রশাসক ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ বলেন, সরকারিভাবে দিঘির পাড়ের সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। পাশের সড়কটিও মেরামত করা হয়েছে।
শিরোনাম
- নারীর অদম্য সাহসেই গড়ে উঠবে জলবায়ু সহনশীল বাংলাদেশ : উপদেষ্টা রিজওয়ানা
- রাজধানীতে সাবেক মেয়রসহ আওয়ামী লীগের ৫ নেতাকর্মী গ্রেফতার
- সম্পত্তি ফেরত পেতে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে মামলা এস আলমের
- আরও এক মামলায় গ্রেফতার সাবেক খাদ্যমন্ত্রী
- অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিএনপি হতাশ : সালাহউদ্দিন আহমদ
- পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ, আবারও মোদির বিরুদ্ধে ট্রাম্পের নতুন কটাক্ষ
- জাতীয় নির্বাচন নাও হতে পারে, সবার আগে জুলাই সনদ হতে হবে: তাহের
- নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মসূচির প্রতিবাদে জাবিতে বিক্ষোভ
- যেভাবে নিজের ক্যারিয়ার কবর দিলেন সাকিব আল হাসান
- ঢাবিতে ভর্তি আবেদন শুরু, কোন ইউনিটের পরীক্ষা কবে?
- ট্রাম্পের দক্ষিণ কোরিয়া সফরের আগে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা উত্তর কোরিয়ার
- মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ
- ‘দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে যুবদল’
- বৃহস্পতিবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে অতিরিক্ত সিম
- অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষক ও প্রভাষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে পরিপত্র জারি
- সূচকের উত্থানে পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন
- জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে এনসিপি
- শিরোনামহীনের 'এই অবেলায় ২' আসছে ডিসেম্বরে
- তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিল শুনানি চলছে
- ভারতে দিওয়ালিতে জনপ্রিয় এক বাজি ফেটে অন্ধ বহু শিশু-কিশোর
হাজার বছরের পুরোনো ওয়াদ্দারদিঘি
মাহবুবুর রহমান, শ্রীপুর (গাজীপুর)
প্রিন্ট ভার্সন
টপিক
এই বিভাগের আরও খবর