ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের যে ফ্লাইটটি নিয়ে এত আলোচনা, তাতে আদতে কোনো বোমা ছিল না। বরং এটি ছিল ‘প্রেমিকাকে নিয়ে’ ছেলের নেপালযাত্রা ঠেকানোর জন্য এক মায়ের ব্যর্থ চেষ্টা। গতকাল সকালে ঢাকার কারওয়ান বাজারে সংবাদ সম্মেলনে বোমাসংক্রান্ত ওই ভুয়া ফোনকল ও তার নেপথ্যের উদ্দেশ্য জানান র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান। এর আগে শুক্রবার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে একটি নম্বর থেকে কল করে জানানো হয় যে বিজি-৩৭৩ ফ্লাইটটিতে বোমা আছে। এ খবর পেয়ে বিমানটির যাত্রা স্থগিত করা হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত বিমানে কোনো বোমা পাওয়া যায়নি। তখন বোঝা যায় যে কলটি ভুয়া ছিল। এরপর এ ঘটনার পেছনে কারা আছে, তা বের করার জন্য র?্যাব অনুসন্ধানে নামে। সারা রাত অভিযান পরিচালনা করে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
কী হয়েছিল?: র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে জানান, এই পুরো বিষয়টি ছিল পরকীয়াকে কেন্দ্র করে। তার বর্ণনায়, ওই বিমানের একজন যাত্রী তার প্রেমিকাকে নিয়ে শুক্রবার বিকালে ওই ফ্লাইটে করে নেপালে যাচ্ছিলেন। তার মা ও স্ত্রী বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর তার যাত্রা বন্ধের চেষ্টা চালান তারা। কোনোভাবেই সক্ষম হন না। তখন ওই যুবকের এক বন্ধু পরামর্শ দেন যদি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে জানানো হয় যে এখানে বোমা আছে, তাহলে হয়তো যাত্রা বন্ধ হবে। ওই পরামর্শ মেনে ওই ব্যক্তির মা বিমানবন্দরে বোমা থাকার কথা জানিয়ে টেলিফোন করেন, যার ফলে এ ঘটনাটি ঘটে।
ফোনকলটি পেয়ে বিমানটি থামিয়ে প্রায় তিন থেকে চার ঘণ্টা তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু বিমানে বোমাজাতীয় কিছু পাওয়া যায়নি। তখন স্পষ্ট হয় যে কলটি সঠিক ছিল না। সে সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম রওশন কবীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, একটি অজ্ঞাতনামা নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয় যে বিমানের ফ্লাইটে বোমা আছে। সে সময় বিমানটি উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তখন যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সবাইকে বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয়। এরপর বিমানবন্দরের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সেখানে গিয়ে বিমানটির ভিতরে তল্লাশি চালায়। তল্লাশিতে কিছু না পাওয়ায় পরবর্তী সময়ে গতকালই এটি কাঠমান্ডুর উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
র?্যাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিমানটি চলে যাওয়ায় যে যুবক ও তার বান্ধবীকে আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, তারাও সেই ফ্লাইটে করে নেপাল চলে গিয়েছেন। এরপর এ ঘটনার তদন্ত করতে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে তদন্ত চালিয়ে এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির মা, তার স্ত্রী এবং বুদ্ধিদাতা বন্ধুকে আটক করা হয়েছে। র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ইতোপূর্বেও বাংলাদেশে এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। টেলিফোনে বোমার খবর দেওয়া হয়েছে, পরে আর পাওয়া যায়নি। এই বিষয়টিকে দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি হুঁশিয়ারি দেন যে ভবিষ্যতে আবারও কেউ যদি এ ধরনের কিছু করে, তাহলে তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। কারণ এ ঘটনায় আমাদের জাতীয় এয়ারলাইনসের এবং দেশে-আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মক ক্ষুণ্ন হয়।