সারা দেশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলসহ সব ধরনের অপকর্ম ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এবার আইনি ব্যবস্থার ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। কোনো নেতা বা কর্মী কোনো ধরনের অন্যায় বা অপরাধ করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনা কেন্দ্র করে কেউ যাতে কোনো রকমের রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে, সে সম্পর্কেও সতর্ক থাকতে বলেছে। তবে যারা দেশের সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্ন ঘটাতে চাইছে, তাদের ব্যাপারেও সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গতকাল পুনরায় এ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে দলের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও গতকাল সব ধরনের অন্যায় ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপির কঠোর অবস্থানের কথা ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করে বলেছেন, তারা (সরকার) অপরাধীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কেন মিটফোর্ডের সামনের খুনের ঘটনায় হত্যাকারীদের এখনো গ্রেপ্তার করেনি। কেন মামলার এজাহার থেকে তিনজন মূল আসামিকে বাদ দেওয়া হয়েছে? কারা মব সৃষ্টি করছে, যুবদলের নেতার হাত ও পায়ের রগ কেটে নিয়ে হত্যা করেছে? এদের বিরুদ্ধে এখনো কেন প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি? কারা দেশের সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করছে? কারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরোধী ছিল? কাদের অবস্থান দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে ছিল এবং আছে। আজ এসব কিছুই বিবেচনা করার সময় এসেছে।
জানা যায়, ৫ আগস্টের পর থেকে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে এ পর্যন্ত সারা দেশে দল এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৫ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে সাড়ে চার হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পর থেকেই সারা দেশে দখল, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছে দলটি। অনিয়ম ও সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপ সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে। তৃণমূল কর্মী থেকে কেন্দ্রের সিনিয়র নেতারাও এই শাস্তির আওতা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলেই সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না বলে কেন্দ্র থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি দেওয়া নির্দেশনায় বলেছেন, সন্ত্রাসী-অপরাধীদের কোনো দল নেই। এদের কাউকেই কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এরা যে দলেরই হোক তাদের ধরে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে। পাশাপাশি দল ও অঙ্গসংগঠনের সর্বস্তরের ইউনিট/কমিটির নেতাদের সর্বোচ্চ ধৈর্য ও কঠোরতার সঙ্গে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, বিএনপি শতভাগ একটি গণতান্ত্রিক দল। আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিজমে বিশ্বাস করে না। এ ক্ষেত্রে দল ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন স্তরের কমিটির নেতা-কর্মীদের কর্মকাণ্ডের দায় সংশ্লিষ্ট কমিটির নেতাদের নিতে হবে। এদিকে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনের ঘটনায় প্রকৃত হত্যাকারীকে এখনো কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি সে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচ্ছন্ন মদত আছে কি না, সে প্রশ্নও রাখেন তিনি। বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, স্বৈরাচার বিদায় হলেও ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে যায়নি। অদৃশ্য শত্রু ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে। এদের প্রতি সব সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে দেশের প্রত্যেকটি সচেতন নাগরিককে। অন্যায়কারী যে-ই হোক কোনো প্রশ্রয় দেবে না বিএনপি।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিভিন্ন অপশক্তি অনুপ্রবেশ করে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। বিএনপির যদি কেউ জড়িত থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ডে যুবদল নেতা সোহাগ হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এ ঘটনায় এখনো মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। তিনজন মূল আসামির নাম রহস্যজনকভাবে এজাহার থেকে কেটে দেওয়া হয়েছে। সরকার ও প্রশাসনের উচিত আর বিলম্ব না করে এসব হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। বিএনপি কখনো কোনো অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দেয়নি এবং দেবে না।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের নামে যারা দুর্বৃত্তপনা করছে, অনৈতিক কর্মকাণ্ড করছে, মানুষকে বিরক্ত করছে, মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করছে তাদের বিএনপি রেহাই দেয়নি। দেবেও না। জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘সাংগঠনিক যে ক্ষমতা আছে, সেটার সর্বোচ্চটা প্রয়োগ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়ারও অনুরোধ আমরা জানাচ্ছি।’ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান বলেন, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসবই করা হচ্ছে সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে। এর মধ্য দিয়ে সংগঠনের ভাবমূর্তি আরও বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।