মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন সংগঠন ‘মঞ্চ ৭১’-এর এক অনুষ্ঠান ঘিরে গতকাল ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে অনুষ্ঠানস্থলে আটকে থাকা সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনসহ ১৬ জনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। এর পর রাতে লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
একই সঙ্গে মোবাইলে উসকানিমূলক বক্তব্য পাওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ঢাকা রিপোর্টার ইউনিটি (ডিআরইউ) থেকে আটক লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হবে। তাদের মোবাইলে উসকানিমূলক বক্তব্য পাওয়া গেছে। ডিআরইউতে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান শিরোনামে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ‘মঞ্চ ৭১’। প্রধান অতিথি হিসেবে গণফোরামের সাবেক সভাপতি ড. কামাল হোসেনের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। প্ল্যাটফর্মটির সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (বীরপ্রতীক) ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। সকালে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয় দিয়ে ১৫-২০ জন ভিতরে ঢুকে স্লোগান দিতে শুরু করেন। তারা ‘২৪-এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘আওয়ামী লীগের গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ, লীগ ধর, জবাই কর’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। তারা অনুষ্ঠানের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং উপস্থিতদের আটকে রাখেন। আতঙ্কিত অনেকেই কক্ষের পেছনের দরজা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। অনুষ্ঠানস্থলে কেশব রঞ্জব সরকার নামের একজনকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করা হয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৩ জনকে আটক করে ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী থেকে বহিষ্কৃত সদস্য লতিফ সিদ্দিকীসহ ছয়জনকে নিয়ে যাওয়া হয় মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে। বুলবুল নামে এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘আমরা প্রোগ্রামে অংশ নিতে এসেছি। আমি তো কোনো মামলার আসামি নই। বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করেছি, আজ স্বাধীন বাংলাদেশে মবের শিকার হলাম। আমার গলা চেপে ধরা হয়েছে, পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।’ অন্য এক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘নিজের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আজ স্বাধীন দেশে আমরা হেনস্তার শিকার হচ্ছি।’ অন্যদিকে জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিদের দাবি, মঞ্চ ’৭১ নাম ধারণ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা একত্রিত হয়েছেন। আল আমিন রাসেল নামে একজন গণমাধ্যমকে বলেন, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এ সংগঠন করা হয়েছে। ফ্যাসিস্টমুক্ত রাষ্ট্র গড়তে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। আমরা যুদ্ধ করে যে ফ্যাসিস্টদের দেশ থেকে বিতাড়িত করেছি, তাদের কোনোভাবেই পুনর্বাসন হতে দেব না। মঞ্চ ’৭১-এর নামে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে।
ডিআরইউর নিন্দা : মঞ্চ ’৭১-এর বৈঠকে উত্তেজনা সৃষ্টিকারীদের ‘বহিরাগত হামলাকারী’ অ্যাখ্যা দিয়েছে ডিআরইউ। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হামলার নিন্দা জানিয়েছে সাংবাদিকদের এ সংগঠন। ডিআরইউর সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সবারই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। গতকালের অনুষ্ঠানটি উন্মুক্ত হওয়ায় হঠাৎ করেই একদল লোক অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করে মব সৃষ্টির চেষ্টা করে। ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ এবং সদস্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ধরনের ঘটনা খুবই ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয় বলে জানান সাংবাদিক নেতারা।