আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ। বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এবং সর্বশেষ অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে তার নামে-বেনামে হাজার কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের নিউ হাইড পার্কে স্ত্রীর নামে ৫ মিলিয়ন ডলারের একটি বাড়ি কিনেছেন। সেখানে আমেরিকান ডেইরি নামে একটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে তার। ওই কোম্পানির এমডি হারুনের স্ত্রী। রাজধানীর উত্তরায় হারুনের বহুতল একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লটের তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডে (লেকপাড়ের রোড) রয়েছে ছয় তলা একটি আলিশান বাড়ি। ‘পার্ক লেক ভিউ’ নামের বাড়িটির হোল্ডিং নম্বর-৩০। এটি গেস্ট হাউস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একই রোডের মাথায় আট তলা আরেকটি বাড়ি আছে হারুনের। এই বাড়ির চতুর্থ তলায় পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। ৩ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর রোডের হোল্ডিং নম্বর-৫ এ ১০ কাঠা জমির ওপর একটি ১০ তলা মার্কেট। এটি হারুনের শ্বশুরের নামে করা হয়েছে। ১২ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ রোডের ২১ নম্বরে ছয় তলা একটি বাড়ি। বাড়িটি বন্ধক রেখে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। ১৩ নম্বর সেক্টরের শাহ মাখদুম এভিনিউয়ে ১২ নম্বর প্লটটির মালিক ডিবি হারুন। এখানে তাজ ফুডকোর্টসহ কয়েকটি দোকান ভাড়া দেওয়া আছে। সোনারগাঁও জনপথ রোডের ৭৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের একটি প্লট জজ মিয়া নামে এক ব্যক্তির কাছে ভাড়া দেওয়া আছে। ৩ নম্বর সেক্টরের ১৫ রোডের ২৩ নম্বর হোল্ডিংয়ে ১৪ বাণিজ্যিক ভবন। ১৩ নম্বর সেক্টরে ৩ নম্বর রোডের ৪৯ নম্বর বাড়িতে ছয় তলা ভবন রয়েছে। ৩ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের ১ নম্বর হোল্ডিংয়ে সাত কাঠার বাণিজ্যিক প্লট রয়েছে। ১০ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের ৩৯ নম্বর হোল্ডিংয়ে পাঁচ কাঠার একটি প্লট রয়েছে তার নামে। এ ছাড়া ৫ নম্বর সেক্টরে ৬ নম্বর রোডে ঢুকতেই প্রথমে ২৯ ও ৩০ নম্বর হোল্ডিংয়ের ১০ কাঠার দুটি প্লটেরও মালিক হারুন। দুটি প্লটের মধ্যে একটিতে টিনশেড ঘর বানিয়ে ভাড়া দেওয়া এবং অন্যটি গোডাউন। ১৪ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডের ১৭ ও ১৯ নম্বর প্লট দুটি প্লটে চারটি কোম্পানিকে শো-রুম হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাড়ির পাঁচ তলায় কথিত মামা জাহাঙ্গীরের অফিস। এ অফিসেই হারুনের সব সম্পত্তির কাগজপত্র সংরক্ষিত থাকে বলে জানা গেছে।
দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্টরা জানান, কথিত মামা জাহাঙ্গীর এবং তার সহযোগী জহিরের মাধ্যমে সব অপকর্ম করতেন হারুন। উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর প্লটটি হিরন নামে এক ব্যক্তির কাছে ৩২ কোটি টাকায় বিক্রি করেন হারুন। আর একই রোডের রবীন্দ্র সরণিতে ৭ কাঠার ৪১ নম্বর প্লটটি মাসিক ১৪ লাখ টাকায় ভাড়া দেওয়া আছে। ১১ নম্বর সেক্টরের উত্তরা স্মৃতি ক্যাবল টিভি লিমিটেডের পাশে ৫ কাঠার আরেকটি প্লট স্টার কার সিলেকশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া আছে। এ ছাড়া বনানী কবরস্থানের দক্ষিণপাশে ২০ কাঠার প্লট দখল করে একটি কোম্পানির কাছে ৭০ কোটি টাকায় বিক্রি করেন হারুন। টঙ্গীর সাতাইশ মৌজায় আট বিঘা জমিতে কোনো অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ শুরু করেন জেএইচ-জিওটেক্স লিমিটেড নামে হারুনের একটি প্রতিষ্ঠান। টঙ্গীর গুশুলিয়া মৌজায় ছায়াকুঞ্জ-৫ আবাসিক প্রকল্পের ভিতরে ১২ বিঘা জমিতে একটি আবাসিক হোটেল নির্মাণ শুরু করা হয়। এ ছাড়া হারুন অর রশীদের নামে কিশোরগঞ্জে মিঠামইনে প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট নামে একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট রয়েছে। যেটি পরিচালনা করেন হারুনের ভাই ডা. শাহরিয়ার। গাজীপুরে রয়েছে সবুজ পাতা রিসোর্ট এবং গ্রিন টেক নামে আরও একটি বিলাসবহুল রিসোর্টের শেয়ার এবং নন্দন পার্কেও শেয়ার আছে হারুনের। ময়মনসিংহের ত্রিশালের সাবেক এমপি আনিসের সঙ্গে ফিশারিজ এবং রেস্টুরেন্টের যৌথ ব্যবসা আছে হারুনের। বিদেশে অর্থ পাচারের সুবিধার জন্য গড়ে তোলা হয় নিজস্ব মানি এক্সচেঞ্জ। দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম জানান, ডিবির হারুন অর রশিদ এবং তার স্ত্রী ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে। সেগুলো তদন্ত হচ্ছে। এ ছাড়া তার কথিত মামা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলমান এবং তার কিছু সম্পদও জব্দ হয়েছে।