দীর্ঘকাল ধরেই বাংলাদেশের শ্রমবাজারের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য। তবে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপানে শ্রমবাজারের নতুন দিগন্ত খুলেছেন। আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ কর্মী নেবে দেশটি। অদক্ষ কর্মী না নেওয়ায় এতদিন জাপানে জনশক্তি রপ্তানিতে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। এবার নিজেরাই প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে জাপানের চাহিদা অনুযায়ী এক লাখ দক্ষ কর্মী তৈরিই মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। অভিবাসনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাপান কখনো অদক্ষ কর্মী নিয়োগ দেয় না। তাদের মানের সঙ্গে না মিললে লোক নেয় না দেশটি। জাপানে যাওয়ার জন্য যে যোগ্যতা প্রয়োজন বাংলাদেশের বেশির ভাগ কর্মী তা অর্জন করতে পারেন না। জাপানি ভাষা শেখার পাশাপাশি কর্মীদের যে কোনো একটি বিষয়ে দক্ষ হতে হয়। তবে সরকারের সাম্প্রতিক এক উদ্যোগের ফলে জাপানের জন্য দক্ষ কর্মী তৈরি করা সম্ভব হবে। এর আওতায় জাপানি প্রশিক্ষকরা সহজেই তাদের সরঞ্জামাদির সঙ্গে কর্মীদের পরিচিত করতে পারবেন এবং সেগুলো ব্যবহারে কর্মীদের দক্ষ করে তুলতে পারবেন।
প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক জাপান সফরকালে দেশটির তিন কোম্পানির সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। এর আওতায় পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ কর্মী নেবে জাপান। পাশাপাশি অভিবাসনপ্রত্যাশী শ্রমিকদের জাপানি ভাষা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে। জাপানের প্রশিক্ষকরা নরসিংদীর মনোহরদীতে অবস্থিত টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে (টিটিসি) ভাষা ও দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেবেন। প্রশিক্ষণের পর কর্মীদের স্পেসিফায়েড স্কিল ওয়ার্কার টেস্ট (এসএসডব্লিউ) নেওয়া হবে। যারা কৃতকার্য হবেন তাদের বিনা খরচে জাপানে নেওয়া হবে।
বিএমইটি সূত্র জানায়, ভাষা ও নির্দিষ্ট কোনো কাজে দক্ষতা না থাকায় বেশির ভাগ কর্মী জাপান যেতে পারেন না। তাই দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে জাপানি প্রশিক্ষক দিয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। প্রশিক্ষণের জন্য প্রাথমিকভাবে নরসিংদী টিটিসিকে নির্বাচন করা হয়েছে। পরে দেশের অন্যান্য ট্রেনিং সেন্টারেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হতে পারে। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, জাপানে অনুমোদিত ৯৬টি রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে প্রতি বছর কর্মী পাঠায় ৩০টি এজেন্সি। গত ২০ বছরে জাপানে গেছেন মাত্র পাঁচ হাজার ১৪ জন কর্মী। এর মধ্যে আইএম জাপান প্রকল্পের অধীনেই প্রায় ৭০২ জন কর্মী জাপানে গেছেন। এ বিষয়ে বিএমইটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক আশরাফ হোসেন বলেন, এক লাখ দক্ষ কর্মী জাপানে পাঠানো আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। জাপান কোন কোন খাতে কর্মী নেবে এবং তাদের স্কিল কী কী হবে-সেই অনুযায়ী কর্মীদের দক্ষ করার ক্ষমতা আমাদের আছে কি না, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। এমওইউর কপি হাতে পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। এরই মধ্যে আমরা আমাদের কাজ শুরু করেছি। অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম বলেন, জাপানে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে কর্মীদের দক্ষতার পাশাপাশি ভাষা শেখাও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের টিটিসিগুলোর ভাষা শেখানোর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে এখন যেহেতু জাপানিরাই ভাষা শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছেন, তাই এ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু হবে। আশা করি বাংলাদেশ এবার কোটা পূরণ করতে পারবে।