শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

অসম্ভবকে সম্ভব করল বার্সা

আসিফ ইকবাল

অসম্ভবকে সম্ভব করল বার্সা

চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে প্যারিস সেন্ট জার্মেইনের বিপক্ষে মহাকাব্যিক জয়ের পর উৎফুল্ল বার্সেলোনার ফুটবলাররা —এএফপি

অসম্ভব, অসাধারণ, অবিশ্বাস্য, চোখ ধাঁধানো-কোনো বিশেষণেই বার্সেলোনার জয়টাকে ফ্রেমে বাঁধা যাবে না! চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে এমন জয় কেউ কখনো দেখেনি, কোনো দল লিখেনি। পরশু রাতে ন্যু ক্যাম্পে লিওনেল মেসি, নেইমার, সুয়ারেজ, সার্জিও রবার্তোরা যা করলেন, সবুজ ঘাসে যা লিখলেন, তার কাছে রূপকথাও ম্লান। হাজার বছরের পুরনো ‘আরব্য রজনী’ও বোধহয় এতটা সৌন্দর্য্য বিলায়নি পাঠকের মনে। কিংবা এত সুন্দর হয়ে পাঠক অথবা শ্রোতার মনকে আপ্লুত ও গ্রাস করেনি। অথবা মুগ্ধতা ছড়িয়ে আবেশী করে তোলেনি। প্যারিস সেন্ট জার্মেইনের বিপক্ষে বার্সেলোনা অক্সিজেন মাস্ক পরে খেলতে নেমে যে জয় তুলে নিয়েছে, সেটা আগামী শত বছরে, কিংবা হাজার বছরে দেখা মিলবে কি না-আগাম করে কেউ বলতে পারবে না। স্বপ্নও দেখা যাবে না। কিন্তু সব অসম্ভবকে সম্ভব করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাতটিকে শুধুই নিজেদের করে নিয়েছে লুইস এনরিকের বার্সেলোনা। ফুটবল বিশ্বকে অবিশ্বাস্য এক রাত উপহার দিয়েছেন মেসি, নেইমার, সুয়ারেজের বার্সেলোনা। তুলে নিয়েছে ৬-১ গোলের স্বপ্নের এক জয়।

প্রথমপর্বে ০-৪ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘোর বার্সার সমর্থকরাও স্বপ্ন দেখতে ভয় পাচ্ছিলেন। স্বপ্ন দেখার দুঃসাধ্যও করেননি। কিন্তু সেই অবিশ্বাস্যটাকেই বিশ্বাস্য করে ৬-১ গোলের জয় তুলে টানা ১০ বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে বার্সেলোনা। বার্সা যে ‘এপিক’ ফুটবল খেলেছে ফ্রেঞ্চ জায়ান্ট পিএসজির বিপক্ষে, সেখানে টানা দশমবার সেরা আটে শুনতে বড্ড কাগুজে মনে হচ্ছে! প্রিয় দলের চোধ ধাঁধানো, রূপকথার জয় দেখে এক ভক্তের ব্যানারই বলে দিয়েছে-কি কাণ্ডটাই না করেছে বার্সেলোনা! ম্যাচ শেষে টিভি পর্দায় ভেসে ওঠা ব্যানারে লেখা ‘ইয়েস উই ক্যান’।

৮৮ মিনিট পর্যন্ত বার্সেলোনা এগিয়ে ৩-১ গোলে। খেলার নির্ধারিত সময়ের বাকি মাত্র ২ মিনিট এবং অতিরিক্ত আরও ৫ মিনিট। মেসি, নেইমারদের বার্সেলোনার জয় নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই। নেই কোনো সংশয়। দুই লেগ মিলিয়ে তখন ৫-৩ গোলের ব্যবধান। স্বস্তিতে পিএসজি শিবির। কিন্তু এনরিকের শিষ্যরা যে ‘মরণপণ’ প্রতিজ্ঞা নিয়ে নেমেছিল-সেটা মনে রাখতে পারেনি সফরকারীরা। শেষ ৭ মিনিটের ভেল্কিতেই বাজিমাত বার্সার। পিএসজির ডি বক্সের বাইরে ফ্রি কিক পায় বার্সা। ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমারের ডান পায়ের ফ্রি কিক বোকা বানায় প্রতিপক্ষের গোলরক্ষককে। স্বাগতিকরা এগিয়ে যায় ৪-১ গোলে। এরপর ফের পেনাল্টি থেকে গোল করেন নেইমার। ব্যবধান ৫-১। দুই দলের গোল ব্যবধান তখন সমানে সমানে, স্কোরলাইন ৫-৫। কিন্তু অ্যাওয়ে গোল করে সুবিধায় পিএসজি। ফ্রেঞ্চ জায়ান্টদের তখন উৎসব শুরু করে দিয়েছে শেষ আটে যাওয়ার। কারণ ম্যাচের বাকি মাত্র ৩০ সেকেন্ড। উৎসব করাই যায়। কিন্তু ফুটবলের ভাগ্যদেবী তখনো হাসছিলেন। তাই ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার ৩০ সেকেন্ড আগে নেইমারের ক্রসে শুধু পা ছোঁয়ান বদলি খেলোয়াড় সার্জিও রবার্তো। ওই হাজার কোটি দামি মহা মূল্যবান গোলেই বার্সেলোনা ৬-১ গোলের অবিশ্বাস্য জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। শুধুই কি জয়, ওই গোলই ব্যবধান গড়ে দেয়। ৬-৫ ব্যবধানে এগিয়ে বার্সেলোনা জায়গা নেয় কোয়ার্টার ফাইনালে।            

শেষ আটে খেলতে লিখতে হবে ইতিহাস-এমন পর্বতসমান চাপ নিয়ে বার্সা খেলতে নামে ন্যু ক্যাম্পে। তৃতীয় মিনিটে পিএসজির রক্ষণভাগের ফুটবলাররা বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে গোলের সূচনা করেন সুয়ারেজ (১-০)। গোলের জন্য মড়িয়া বার্সা একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে ৪০ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায়। এবারও প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় বার্সা। আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার ব্যাক হিল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হয়েই নিজেদের জালেই ঢুকিয়ে দেন লেইভিন (২-০)। দুই গোলে এগিয়েই বিরতিতে যায় এনরিকের শিষ্যরা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পেনাল্টি থেকে ব্যবধান ৩-০ করেন মেসি। পাঁচবারের বিশ্বসেরা ফুটবলারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটা ৯৪ নম্বর গোল এবং এবারের আসরে ১১ নম্বর। ৬১ মিনিটে ন্যু ক্যাম্পে কবরের নিস্তব্ধতা নামিয়ে আনেন এডিসন কাভানি গোল করে (১-৩)। ওই গোলেই স্কোর লাইন দাঁড়ায় (৫-৩)। এরপরই শুরু নেইমার ম্যাজিক। যার ওপর ভর করেই রূপকথার জয় তুলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেরা আটে জায়গা করে নেয় বার্সেলোনা।

দিনের অন্য ম্যাচে পর্তুগালের বেনফিকাকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে জার্মানির বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। দুই লেগ মিলিয়ে জার্মান ক্লাবের জয় ৪-১ গোলে।

সর্বশেষ খবর