বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশ্বকাপের আগে ব্রিসবেন-দুঃখ

মেজবাহ্-উল-হক

বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে! বিশ্বকাপ শুরু হয়নি! দুটি বাক্যই ঠিক। কারণ, ১৬ অক্টোবর থেকে প্রথম রাউন্ডের যে লড়াই শুরু হয়েছে, সেটি আসলে বাছাইপর্ব। বিশ্বকাপের আসল লড়াই শুরু হবে সুপার টুয়েলভ থেকে। যেখানে র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা ৮ দল সরাসরি অংশ নিচ্ছে। বাকি চার দলকে নেওয়া হবে প্রথমপর্ব থেকে।

বাংলাদেশ এবার সরাসরি সুপার টুয়েলভে। টাইগারদের প্রথম ম্যাচ ২৪ অক্টোবর হোবার্টে, ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ দলের বিরুদ্ধে। বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য ব্রিসবেনে দুটি ওয়ার্মআপ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৬২ রানে হার। আর গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচ বৃষ্টিতে প- হয়ে যায়।

প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল যাচ্ছেতাই। ২০ ওভারে ১০০ রানও করতে পারেননি ব্যাটাররা। পুরো দলই ছিল এলোমেলো। টপ অর্ডার, মিডল অর্ডার কিংবা লোয়ার অর্ডার -সবাই ব্যর্থ। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টি-২০র মেজাজই ছিল না। কেবল বাইশগজে যাওয়া-আসা করতেই শেষ। 

গতকাল দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল টাইগারদের সামনে। প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ২৭ অক্টোবর চূড়ান্ত লড়াই হবে। তার আগে নিজেদের শক্তি পরীক্ষার যে একটা সুযোগ ছিল সেটিও নষ্ট করে দিল বেরসিক বৃষ্টি। কোনো বলই মাঠে গড়ায়নি। টস হওয়ার আগেই ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যায়। দুই প্রস্তুতি ম্যাচের দুটিতেই হতাশা।

নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে সবগুলো ম্যাচ হারলেও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান দাবি করেছিলেন, তারা সঠিক পথেই আছেন এবং বিশ্বকাপের সেরা কম্বিনেশন খুঁজে পেয়েছেন। টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম বলেছিলেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই। ধীরে ধীরে পারফরম্যান্সের উন্নতি হচ্ছে। তিনি যেভাবে এগুতে চেয়েছিলেন, সেভাবেই সব কিছু হচ্ছে।

কিন্তু প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে দেখা গেল উল্টো চিত্র। দলের সব কিছুই এলোমেলো। ছন্দহীন। ওপেনিংয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে সৌম্য সরকারের নামার কথা থাকলেও সেই জায়গায় ব্যাট করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আর ইনজুরির কথা চিন্তা করে লিটন দাসকে মাঠেই নামানো হয়নি।

বাংলাদেশের পারফেক্ট কম্বিনেশন যে এখনো হয়নি সেটা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে সহজেই চোখে পড়েছে। এর একটা বড় প্রভাব পড়েছে ব্যাটিংয়ে। বোলাররা যদিও ততটা খারাপ করেননি। তারা আফগানিস্তানকে ১৬০ রানে আটকে দেয়। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা ৯৮ রানেই অলআউট। প্রস্তুতি ম্যাচে অপ্রস্তুত বাংলাদেশ।

টি-২০ বিশ্বকাপে বরাবরই বাংলাদেশের পারফরম্যান্স হতাশাজনক। শেষ আসরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভরাডুবির পর থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে লাল-সবুজরা। এক বছরেও ঠিকঠাক প্রস্তুতিই সম্পন্ন হয়নি টাইগারদের।

বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এশিয়া কাপ টি-২০ ফরম্যাটে করা হয়েছিল এবার। যে এশিয়া কাপের শেষ ৪ আসরের মধ্যে তিনবারই ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ, এবার সেখানে প্রথম রাউন্ডেই বিদায়।

তারপর বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের টি-২০ সিরিজ খেলে বাংলাদেশ দল। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব ছিলেন না। বাংলাদেশ সিরিজ জিতলেও ব্যাটিংয়ে দুর্বলতার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছিল। তারপর ত্রিদেশীয় সিরিজে তো যাচ্ছেতাই।

দুই প্রস্তুতি ম্যাচেও হতাশা। এক ম্যাচে এলোমেলো পারফরম্যান্স, আরেক ম্যাচে বৃষ্টি-বাধা। আর কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ নেই। আর কোনো সুযোগ নেই। হতশ্রী প্রস্তুতি নিয়ে চূড়ান্ত পর্বে মাঠে নামতে হবে বাংলাদেশকে। কথা ছিল ব্রিসবেন থেকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করবেন সাকিবরা। কিন্তু আশায় গুঁড়েবালি। উল্টো ব্রিসবেন যেন টাইগারদের আত্মবিশ্বাসের গ্রাফটা আরও নিচে নামিয়ে দিল। আরও হতাশ করে দিল। ব্রিসবেন-দুঃখ নিয়েই এখন শুরু করতে হবে বিশ্বকাপ মিশন। 

সর্বশেষ খবর