ফুটবলে মানের অবনতি ঘটলেও প্রতি মৌসুমের দেখা যায় খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক বাড়ছে। কে কত টাকা পাচ্ছেন তা কখনো জানা যায় না। এ ক্ষেত্রে ক্লাবগুলো যেমন নীরব থাকে, তেমন খেলোয়াড়রাও মুখ বন্ধ রাখেন। চুপ থাকলেও পেশাদারির যুগে ঘরোয়া আসর খেলে যে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন তা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আকাশ ছোঁয়ার মতো। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে মোনেম মুন্নার ২০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে সারা দেশে আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল। এর আগে কায়সার হামিদ, শেখ মো. আসলাম কিংবা রুম্মন ওয়ালি বিন সাব্বির যে অর্থ পেতেন তা নিয়েও কম হইচই হয়নি। আরেকটু আগের কথা বলি, শামসুল আলম মঞ্জু ১৯৭৫ সালে আবাহনী ছেড়ে মোহামেডানে যোগ দেন। দলবদলে তাঁকে পেয়ে সাদা-কালোর সমর্থকরা যে উৎসব করেছিলেন পরে আর কোনো তারকার ঘর ছাড়া নিয়ে তা হয়নি।
মঞ্জু কত টাকায় মোহামেডানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন? শুনলে অনেকে অবাক হয়ে যাবেন। ৩০ হাজার করে তিন বছরের জন্য ৯০ হাজার টাকায় মোহামেডানে যোগ দেন। এখন যা ফুটবলে কোনো টাকাই নয়। অবশ্য ওই সময়ে ৯০ হাজার টাকার মূল্য ছিল অনেক। তাই মঞ্জু সবচেয়ে ধনী খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছিলেন। কাজী সালাউদ্দিনই ঘরোয়া আসরে প্রথম লাখপতি ফুটবলার। ১৯৭৬ সালে তিনি আবাহনী থেকে এ অর্থ পান। মুন্না, কায়সার, আসলাম, সাব্বির, মঞ্জু বা সালাউদ্দিন যে সময়ে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পেয়েছেন তখনো ফুটবলের মান যে আহামরি ছিল তা বলা যাবে না। কিন্তু জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে, দর্শক তাদের নামে ছিল পাগল। কিন্তু মান ও জনপ্রিয়তা দুটোই অবনতির পরও ফুটবলাররা এখন যে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন তা অকল্পনীয়ও বলা যায়। সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নাকি ৭০ থেকে ৮০ লাখও ছাড়িয়ে গেছে।
জাতীয় দলের মান যতই নিচে থাকুক। ঘরোয়া আসরে পারিশ্রমিক বাড়াটা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। শক্তিশালী দল গড়তে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা খরচ লেগে যায়। কারও ক্ষেত্রে আরও বেশি। মধ্যম বা কোনোমতে দল গড়বেন এতেও সব মিলিয়ে ১০ বা ২০ কোটি টাকা খরচ লাগবে। ক্লাবগুলোর কিছু করারও নেই। চ্যাম্পিয়ন ফাইট বা দেশসেরা আসরে তো খেলতে হবে। সুতরাং যা ডিমান্ড তা মেটাতে হবে। অনেকের ধারণা ছিল দেশের যেমন প্রেক্ষাপট থাকুক না কেন এবার নতুন মৌসুমে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক বাড়বে। বিশেষ করে হামজা, সামিতরা জাতীয় দলে খেলার পর ফুটবলে যে জাগরণ ঘটেছে তা কাজে লাগিয়ে স্থানীয় ফুটবলাররা পারিশ্রমিক বাড়িয়ে নিতে পারবেন।
না, এবার দেখা যাচ্ছে উল্টো দৃশ্য। লোকাল ও ফরেন খেলোয়াড়রা ইচ্ছামতো পারিশ্রমিক দাবি করতে পারছেন না। বরং অর্থ আরও কমতে পারে। ফুটবলের নতুন মৌসুম আসি আসি করছে। ১৪ আগস্ট শেষ হবে দীর্ঘদিনব্যাপী দলবদলের কর্মসূচি। এর পরও দলবদল নিয়ে কোনো উত্তাপ নেই। এর বড় কারণ পরিচিত মুখদের ঘরছাড়ার ঘটনা নেই। যাবেন কোথায়, পারিশ্রমিক তো আর বাড়বে না। আর বাড়লেও তা হাতেগোনা। পুরোনো দলই তো বলছে ডিমান্ড কমাতে হবে, না হলে দেখতে পারেন! কিংস, আবাহনী, মোহামেডান যেখানেই খেলুন না কেন, সবখানেই অভিন্ন চেহারা। ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না কেউ। হয় আগের পারিশ্রমিক পাবেন, না হয় একটু বাড়িয়ে নিচ্ছেন এই যা। আকাশ ছোঁয়ার মতো অবস্থা নেই। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় বা ছোট সব ক্লাবেরই হায় হায় অবস্থা। সুতরাং যা পাবেন তা নিয়েই তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে হবে।